৮ সন্তানকে আনতে পেরেছি আরেকজন জেলে
মিয়ানমারে সবজির ব্যবসা করতেন ইউসুফ জালাল। তার ঘরে ৯ সন্তান। নয়জনই তার খুব আদরের। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে অন্যদের মতো তিনিও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য ফকিরা বাজার থেকে হেঁটে রওনা দেন। দীর্ঘ পাহাড় পেড়িয়ে সীমান্ত দিয়ে ২ দিন হেঁটে অবশেষে আসেন বাংলাদেশে।
আশ্রয় নিয়েছেন অন্য রোহিঙ্গাদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো স্থানে। থাকছেন ৫০০ টাকায় ঘরভাড়া নিয়ে। বাংলাদেশে এসে নতুন জীবন ফিরে পেলেও ইউসুফের আক্ষেপ একটাই, ‘বড় ছেলে সর্দার হোসেনকেও যদি আনতে পারতাম।’
প্রতিবেদকের সামনে একসঙ্গে ৮ সন্তানকে নিয়ে বলেন, সর্দার ছাড়া বাকি ৮ জন হচ্ছেন ইয়াসিন, মুজিবর রহমান, তসমিন আরা, আসমা, মামুন মোস্তফা, সুমাইয়া, সাইফুল মোস্তফা এবং জুনায়েদ। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পর আমরা সবাই এসেছি, কিন্তু সর্দারকে ওরা জেলে নিয়ে গেছে।
ইউসুফ বলেন, সর্দারকে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী মনে করে ৭ মাস আগে ধরে নিয়ে গেছে সেনাবাহিনী। সে বর্তমানে বুসিদং জেলে আছে। কয়েকদিন আগেও তার সঙ্গে জেলখানায় দেখা করে আসলাম। এখন কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। বেঁচে আছে নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানি না। আমরা বড় ছেলেটা থাকলে পরিবারটা পরিপূর্ণ হতো।
ইউসুফের মতো এমনই বর্বরতার শিকার সুরত আলম নামের মিয়ানমারের একজন প্রাইভেট কোচিং শিক্ষক। তার বাড়িও ফকিরা বাজার পাড়ায়। চলমান সহিংসতায় ঈদুল আজহার দুই দিন আগে তার বড় ভাই এবং ভাবীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। রাইফেল দিয়ে মেরে হাত ভেঙে ফেলা হয় সুরতের মায়ের। মা আর ভাইয়ের দুই ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের মোট ১২ জনকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি।
সুরত আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমি ফকিরা বাজার এলাকায় ক্লাস ফাইভ-সিক্সের শিক্ষার্থীদের পড়াতাম। গণ্ডগোলের পর অনেক দিন অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু যেদিন আমার মা’কে মেরে সেনাবাহিনী হাত ভেঙে দিল, সে দিন পালিয়ে চলে আসলাম কক্সবাজার।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইউসুফ আর সুরত আলমের মতো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়াকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে বলেছে, শরণার্থীর ঢলে বাংলাদেশ সীমান্তে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এআর/এআরএস/জেআইএম