‘ধানখেতে শুয়েছিলাম, তবুও গুলি লাগল’
জীবন বাঁচাতে ধানখেতে লুকিয়েছিলেন। লুকিয়েও রক্ষা পাননি রোহিঙ্গা করিমা খাতুন। মিয়ানমারের সেনারা ধানখেত লক্ষ্য করেও গুলি করতে থাকে।
গুলিতে প্রাণ যায় করিমার ৬ বছরের ছেলের। একটি গুলি করিমা খাতুনের বাম হাতে এসে লাগে। হাতের এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয় গুলি। অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। সেই অবস্থাতেই দীর্ঘক্ষণ পড়েছিলেন খেতের মধ্যে। তাণ্ডব থামার পর অন্যরা গিয়ে উদ্ধার করেন করিমাকে।
এরপর ছেলের লাশ ধানখেতে রেখেই পালিয়ে বাংলাদেশের সীমানার দিকে রওনা দেন করিমা।
আটদিন হাঁটার পর বুধবার সন্ধ্যায় টেকনাফের বাংলাদেশ সীমানায় এসে পৌঁছান তিনি। সাগরের তীরে এসে আর হাঁটতে পারছিলেন না করিমা। অন্যরা এগিয়ে গেলেও দল ছেড়ে বসে পড়েন ভেজা মাটিতেই। আহত হাত নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন, ব্যথায় দম যেন বেরিয়ে যাচ্ছিল তার।
নাফ নদীর তীরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় করিমার। হঠাৎ জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া করিমার চোখে তখন রাজ্যের বিস্ময়। কী আছে সামনে সে সম্পর্কে নেই কোনো ধারণা।
গুলিতে করিমার হাতের ছিদ্র হওয়া অংশে দুর্বা চিবিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। চিকিৎসা বলতে ওই দুর্বাটুকুই। হাসপাতালে যেতে পারেননি তিনি। একটু ওষুধও খাওয়া হয়নি। লুঙ্গির তেনা দিয়ে হাত বেঁধে দিয়েছিলেন মা।
ছেলে হারানো করিমার দু’বাক্যের কথা, ‘ধানখেতে শুয়েছিলাম, তবুও গুলি লাগল। ওরা আমার ছেলেকেও হত্যার করল।’
মিয়ানমারের নৃশংসতা যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল করিমার চোখ দিয়ে। অনিদ্রা আর অনাহারও স্পষ্ট চোখে-মুখে। বৃদ্ধ মায়ের কাঁধে ভর করেই সীমানার এপারে এসেছেন। স্বামী নূর মোহাম্মদেরও কোনো খবর জানেন না।
করিমার বৃদ্ধা মা বলেন, সবই রেখে এসেছি। ওর আর শরীর চলছে না। আমিও হাঁটতে পারছি না। খাওয়া নেই। ঘুম নেই। সবাই ছেড়ে গেল ক্যাম্পে। রাত হয়ে যাচ্ছে। জানি না মেয়েকে নিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছাতে পারব কি না!
এএসএস/এনএফ/আরআইপি