ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ল্যাব টেকনোলজিস্ট হতে পারলো না সোমা

প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ১২ জুন ২০১৫

এক বছরের ইন্টার্নির প্রথম ছয় মাসের শেষ দিন ছিল ১২ জুন শুক্রবার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ল্যাব টেকনোলজিস্ট এর উপর ইন্টার্নশিপ শেষ করে বক্ষব্যধি হাসপাতালে আরো ছয় মাসের ইন্টার্নশিপ করার কথা ছিল সোমা আক্তারের (২৩)। কিন্তু ল্যাব টেকনোলজিস্ট হতে পারলো না সোমা। এখন মেডিকেলে চলছে তার লাশের ময়নাতদন্ত। পরিবারের অভিযোগ `যৌতুকের টাকা না পেয়েই খুন করা হয় সোমাকে`।

রাজধানীর কলাবাগানে কমফোর্ট হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাতে সোমার লাশ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয় স্বামী আমিনুল ইসলামকে। পরে শুক্রবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।


এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই মিরপুর মডেল থানায় বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন সোমা আক্তারের বাবা তমিজ উদ্দিন মাস্টার। নিহত সোমার গ্রামের বাড়ি সাভার বিকেএসপি থেকে বনুপুর বাজারে।


ময়নাতদন্ত শেষে সাভার বিকেএসপি পাশ্ববর্তী বনুপুর বাজার গ্রামের বাড়িতে সোমার লাশ নিয়ে রওয়ানা দিয়েছেন নিহতের পরিবার।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে ইন্টার্নি শুরু করেছিলেন সোমা আক্তার। শুক্রবার তার ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার কথা ছিল। স্বামীর সঙ্গে কল্যাণপুরের ১১ নম্বর সড়কের ৪৪ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি।


নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুর একটা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজে ব্যস্ত ছিলেন সোমা। এ সময় সোমাকে বারবার ফোন করেন স্বামী আমিনুল। পরে তাকে কল্যাণপুরের বাসায় নিয়ে যেতে বাধ্য করেন আমিনুল এবং সন্ধ্যা ৭টার দিকে সোমাকে মৃত অবস্থায় কলাবাগানের কমফোর্ট হাসপাতালে পাওয়া যায়।


এ ব্যাপারে সোমার চাচা নূরুল ইসলাম জানান, সোমার গলা ও কানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাকে হত্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তার দাবি, কমফোর্ট হাসপাতালে সোমাকে মৃত অবস্থায় রেখে পালানোর চেষ্টা করে আমিনুল। তবে হাসপাতালের কর্মচারীরা আমিনুলকে দ্বিধান্বিত দেখে আটক করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আমিনুলকে মিরপুর থানায় পাঠানো হয়।


এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সোমার সহপাঠি তানভীর আহসেদ জাগো নিউজকে বলেন, সোমা অত্যন্ত ভালো মেয়ে। সবার সঙ্গে আন্তরিকভাবেই মিশতো। আমরা সবাই জানতাম সোমা স্বামীর সাথেই কল্যাণপুরে থাকে। কিছু দিন আগে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় সোমা। তখন জানতে পারি স্বামীর সাথে মনোমালিন্য চলছিল সোমার। পরে স্যার ও আমরা সবাই মিলে সে পর্বে ওর স্বামী আমিনুলকে ডেকে নিজেদের সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করি।


তানভীর আরো বলেন, গতকালও (বৃহস্পতিবার) ওকে বিমর্ষ দেখা গেছে। সকালে শুনতে পাই ওর রহস্যজনক মৃত্যুর কথা।

এ ঘটনায় মিরপুর থানা মামলা করেছেন সোমা আক্তারের বাবা তমিজউদ্দিন মাস্টার। এ ব্যাপারে সোমার বাবা বলেন, বছরখানেক আগে পারিবারিকভাবে সোমার সঙ্গে আমিনুলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালো চলছিল সংসার। কিন্তু সম্প্রতি আমিনুল যৌতুক বাবদ ২০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকার জন্য প্রায়ই নানাভাবে সোমাকে চাপ দিতো আমিনুল। একাধিকবার মেয়ের গায়ে হাতও তুলেছে আমিনুল। এ নিয়ে মেয়ে-জামাইয়ের সংসারে টানাপোড়েন চলছিল। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।


এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানায় যোগাযোগ করা হলে মিরপুর থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) মুকতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও হত্যার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় স্বামী আমিনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন করতে গিয়ে নিহত সোমার গলায় ও কানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে কিভাবে সোমার মৃত্যু হয়েছে।


তিনি জানান, দায়ের করা মামলায় আমিনুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।


জেইউ/আরএস