আরাকান এখন ‘মগের মুল্লুক’
‘মগের মুল্লুক’। কোন আমলে বৌদ্ধ মগদের যাতনায় পড়ে কে এই প্রবাদ রচনা করেছিলেন, তা ইতিহাসের বিষয়। কিন্তু মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ যে এখন ‘মগের মুল্লক’ তা আর কোনো ইতিহাস নয়। আরাকান প্রদেশ ‘মগের মুল্লুক’ এটি এখন বাস্তবতা।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মগ জনগোষ্ঠীই ইতিহাসের জঘন্যতম ধারা সৃষ্টি করতে চলেছে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে। জরবদখল আর জুলুমের সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করেছে মগ’রা। পাহাড়ি এ দেশটির আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে মগেরা।
রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আর সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে মিয়ানমার সরকারও এই জুলুম-নির্যাতনে সায় দিচ্ছে। মিয়ানমারের পুলিশ আর সশস্ত্র বাহিনী মগদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে রোহিঙ্গা নিধনের মিশনে নেমেছে।
‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের পুলিশ ফাঁড়ি আর সেনা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ এনে সেনাবাহিনী ভয়ংকর নির্যাতন শুরু করে মুসলিম এই জনগোষ্টির ওপর। পুলিশ আর সেনাবাহিনী মিলেই মুসলিম প্রধান গ্রামগুলো পোড়াতে থাকে।
রোহিঙ্গা যুবকদের নির্বিচারে হত্যা করতে শুরু করে। হত্যার শিকার হয় কোমলমতি শিশুরাও। ধর্ষণ করে তরুণীদের গায়ে আগুন দিয়ে মারার ঘটনাও ঘটছে। জবাই আর পুড়িয়ে মারছে নিরস্ত্র মানুষদের।
আর এসব নির্যাতনের প্রতিটির সঙ্গেই সম্পৃক্ত রয়েছে বৌদ্ধ মগেরা। হত্যা, ধর্ষণ আর লুটতরাজ করে মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এই উগ্রবাদীরা।
সেনাবাহিনী আর মগদের নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা দিচ্ছিলেন রোহিঙ্গা নারী সাবেকুন্নাহার। সাবেকুন্নাহারের বাড়ি মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের মন্ডু উপজেলার ফকিরাবাজার গ্রামে। ৩৫ বছর বয়সী সাবেকুন্নাহারের ঘরে এক মেয়ে দুই ছেলে। স্বামী-সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে তাবু গেড়েছেন ঈদের পর।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নির্যাতিতা এই নারী বলেন, ঈদের তিন দিন পরের ঘটনা। বিকেলে টুপি মাথায় দিয়ে বেশ কয়েকজন অপরিচিত লোক আমাদের গ্রামে প্রবেশ করে। চারজন আমাদের বাড়িতেও আসে। পরে বুঝতে পারি মুসলমানের বেশ ধরে বৌদ্ধ মগরা এসেছে। এর কিছুক্ষণ পরেই গ্রামে হৈ-চৈ পড়ে যায়। বাড়ি ঘরে আগুন জ্বলে উঠে। চারিদিকে গুলির শব্দ।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মগদের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতনের অভিযোগ আনেন রোহিঙ্গা আরিফুর রহমান। আরিফুর আরাকান রাজ্যের তুমব্রু রাইট গ্রামে বসবাস করতেন। ব্যবসা করে বাড়ি-গাড়ি সবই করেছিলেন। মিয়ানমার সেনারা গত ৬ জুলাই তুমব্রু গ্রাম জ্বালিয়ে দিলে আরিফের বাড়িও পুড়ে ছাই হয়। পুড়ে দিয়েছে সখের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রাইভেটকারটিও।
তিনি বলেন, মগদের এক ধর্মীয় নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুসলিম বিদ্বেষী বয়ান দেয়ার পর থেকেই মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। ওই ধর্মীয় নেতা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করেই সন্ত্রাস উসকে দিচ্ছেন। সংঘর্ষ হলেও আগে কখনও এমন নির্যাতন হয়নি। আগে সেনারাই এসে আমাদের রক্ষা করত। আর এখন মগদের সঙ্গে সেনারাই গুলি করছে, হত্যা করছে। গোটা আরকান এখন মগের মুল্লুকে রূপ নিয়েছে।
এএসএস/ওআর