মসজিদ মন্দির উন্নয়নে ৬৬৫ কোটি টাকা পাচ্ছেন এমপিরা
নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অর্থ পাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। এজন্য ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে আলাদা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে সভায়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি জানান, ‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা বরাদ্দ পাচ্ছেন সংসদ সদস্যরা। এই টাকা পছন্দমতো মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, গির্জা, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা এবং খেলার মাঠ উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবেন।
মুস্তফা কামাল বলেন, এ প্রকল্পের জন্য সংসদ সদস্যরা সরাসরি বরাদ্দ পাবেন না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। তবে সংসদ সদস্যের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকা বাদে প্রত্যেক উপজেলার জন্য ১ কোটি টাকা করে দেশের ৪৯১টি উপজেলার জন্য ৪৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ত কাজ থেকে বরাদ্দ হিসাবে আরও ১০৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। থোক বরাদ্দের অর্থ চাহিদা ও গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যয় করা হবে। ফলে পূর্ত কাজে মোট বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্পে স্ব-স্ব এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। এবার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সরকার বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ কোটি টাকা করে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি এখন বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সভায় অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো
> এক হাজার ২১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এর ব্যয় ৯৮৬ কোটি টাকা।
> চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং ৭২ এর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্প। এর ব্যয় ১৯৭ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নং ৭২ এর ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প। এর আগে চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ সফরকালে সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। গত ষাটের দশকে উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সারাদেশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পোল্ডারসমূহ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর থেকেই সন্দ্বীপ উপজেলায় অবস্থিত বাপাউবো’র পোল্ডার ৭২ এর তেমন কোন পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯১ সালের প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের বন্যা ও ঘুর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ঘুর্ণিঝড় আইলা এবং তৎপরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এবং প্রতি বছর উঁচু জোয়ারের ফলে সন্দ্বীপের পোল্ডার নং ৭২ এর বাঁধ/সী-ডাইক/অবকাঠামোসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই এ প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
> বাংলাদেশের ২৩টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৯৯২ কোটি টাকা।
> নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
> আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ১০৩ দশমিক ৪৩ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় ৬৫ কোটি টাকা।
> সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৩৯৮ কোটি টাকা।
> যমুনা নদীর ভাঙ্গন থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় খুদবান্দি, সিংড়াবাড়ি ও শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ প্রকল্প। এর ব্যয় ৪৬৫ কোটি টাকা।
> গোপালগঞ্জ বহুতল বিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস নির্মাণ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৯৮ কোটি টাকা।
এমএ/ওআর/জেআইএম