তবুও আসতে চায়!
জীবন। শরণার্থীর জীবন। যে জীবনের নিশানা থাকে না। যে জীবনের স্বপ্নও থাকতে নেই। শুধু বেঁচে থাকাই যে জীবনের স্বপ্ন-সাধ, সে জীবন মুহূর্তেই আটকে যায় সীমানার কাঁটাতারে। পতাকার সীমানা আর কাঁটাতারের বেড়াতেই আটকে যাচ্ছে বিশ্বমানবতা। আটকে গেছে মিয়ানমারের রোঙ্গিরাও।
মঙ্গলবার সকালের কথা। দু’দফা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে ভোর থেকে। বৃষ্টি শেষে তখন সজীবতা পাহাড়জুড়ে। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ির তুমব্রু গ্রামের রূপ এ সময় যেন উপচে পড়ছে। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা খালসম ছোট্ট নদী। নদীতে পাহাড় চুয়ে আসা আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার।
এ নদীর কাদাযুক্ত পানিই এখন জীবন বাঁচাচ্ছে আরাকান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের।
এ গ্রামের সীমানা ঘেঁষেই নো-ম্যান্সল্যান্ডের ওপর ঘাঁটি করেছে প্রায় ১২ রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার এলাকায় তুমব্রু রাইট গ্রামের কাঁটাতারের সীমানা খুলে দেয়া হয়েছে গেল ঈদের আগে। এ সীমানা দিয়েই স্রোতের মতো ঢুকে পড়ে রোহিঙ্গারা। আর যে মিয়ানমারের সীমানা পার হতে চায়নি, তাকেই হত্যা করছে সে দেশের সেনাবাহিনী আর বৌদ্ধরা। সীমানা পার হয়ে কেউ নো-ম্যান্সল্যান্ডের মধ্যকার শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন কেউ বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করছেন। রোহিঙ্গাদের সীমানা পারাপারের এ নিরন্তর চেষ্টা এখন প্রতিক্ষণের।
মঙ্গলবার সীমানা পারের এমনই চেষ্টায় ছিল রোহিঙ্গা এক শিশু। বাবা-মায়ের সন্ধান জানে না রোহিঙ্গা ওই শিশু। সকাল থেকেই বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছিল এপারে আসার। খালি পা। গেঞ্জি পরা। বস্তায় করে কী যেন নিয়ে এসেছে অবুঝ এই শিশু। ক্ষুধা আর অনিদ্রা ওর মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে আগেই। কখন, কী খেয়েছে, কে জানে?
ও জানে, এ দেশ ওর না। তবুও আসতে চায়। দু’বার চেষ্টা করে ফিরে গেছে। তৃতীয়বার এসেও আটকে গেছে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সামনে। ওপারে বন্দুক তাক করে আছে মিয়ানমার বিজিপি (বর্ডার গার্ড পুলিশ)। ফিরলেই গুলি।
হয়তো আর ফিরতে চায় না ও দেশে। তাই জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে বেঁচে থাকার তাগিদে এ পারেই আসতে চাওয়া। আর সম্বল শুধু অসহায় চাহনি।
গেল ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জঙ্গিরা রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ চেক পোস্টে হামলা চালায়। এতে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহত হন।
এরপরই নৃশংশ অভিযানে নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই অভিযান শুরুর পর জীবন বাঁচাতে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে ঢুকেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে অভিযান শুরুর পর অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে।
রাখাইনে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় নির্মম এ নির্যাতনের খবর মূলত পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে। পালিয়ে আসা এ রোহিঙ্গারা বলছেন, সেখানে তাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এএসএস/এনএফ/জেআইএম