‘এক কোপে মায়ের গলা কাটল’
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে অারাকান রাজ্যের মন্ডু উপজেলার মেরালা গ্রাম থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ এসেছেন দিলবাহার। চোখের সামনেই দেখেছেন, দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার মাকে জবাই করে হত্যা করেছে। চোখের সামনে মাকে জবাই করতে দেখে তিনি এখন অনেকটাই বাকরুদ্ধ।
ঈদের পাঁচদিন পর মেরালা গ্রামে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় বৌদ্ধ ও মিয়ানমারের সেনারা। গ্রামের অসংখ্য মানুষকে জবাই ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
দিলবাহার বলেন, ‘বৃদ্ধ মা। হাঁটতে পারছিল না। হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের বাইরে অাসতেই দা দিয়ে এক কোপে মায়ের গলা কাটল এক সেনা। মা অামার গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছিল। চিৎকার দেয়ারও সময় পাননি। মায়ের লাশটিও ছুঁতে পারি নাই।’
চোখের সামনে মায়ের এমন অবস্থা দেখে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে অাছেন রোহিঙ্গা নারী দিলবাহার। সব হারিয়ে প্রাণভয়ে সীমানা পার হয়ে বাংলাদেশ চলে এসেছেন গত রাতে। এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি। উখিয়া উপজেলার বালুখালী এলাকায় রাস্তার পাশে বসে চাতকের মতো চেয়ে অাছেন। অাহত স্বামী অাব্দুল হক কোথায় অাছেন, তারও খোঁজ পাননি। চার সন্তান নিয়ে গত রাত থেকে অনাহারে। অাহত শরীর নিয়ে ত্রাণের জন্যও দাঁড়াতে পারছেন না।
শরীরজুড়ে নির্যাতনের চিহ্ন। কান ফেটে রক্ত ঝরছে। নিষ্ঠুর নির্যাতনে দু’চোখ এখনও কালচে। বাম চোখে কিছুই দেখতে পান না তিনি। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। অসহায় রোহিঙ্গা এই নারীর কথা যেন সরছিল না। স্বজন হারানোর বেদনা আর ক্ষুধার যাতনা তাকে পাথর বানিয়েছে।
চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘অামার বৃদ্ধ মায়ের কী দোষ ছিল? মায়ের লাশটাও অানতে পারলাম না।’ দিলবাহারের কান্না, ‘ওরা (সেনারা) পশুর মতো অামার ওপরও হামলে পড়ে। সারা শরীরে মারপিট করতে থাকে। গায়ে জোর ছিল বলে দৌড়ে পালাই। মা তো অার দৌড়ে পালাতে পারল না।’
রাত থেকে একটি দানাও পেটে পড়েনি। তিনি বলেন, ‘শরীর নিয়ে ত্রাণের জন্য রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে পারছি না। সন্তানরা না খেয়ে অাছে। কী খাব, কোথায় থাকব কিছুই জানি না।’
এএসএস/আরএস/এমএস