স্বামীর খোঁজে স্ত্রী, র্যাব বলছে ‘গ্রেফতার’
রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডের ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলাবিশিষ্ট ‘কমল প্রভা’ ভবনের মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ এবং পাশের আজাদ গলির নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলাম (২৫) র্যাব হেফাজতে রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের প্রধান মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নিয়মিত মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামীর খোঁজে ঘটনাস্থলে হাজির হন সিরাজুলের স্ত্রী নাজমা আক্তার। তিনি জানান, বর্ধনবাড়ি এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানা’ ভবনের পাশের আজাদ গলিতে নৈশপ্রহরী হিসেবে তিন মাস ধরে কাজ করছেন সিরাজুল।
তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন সোমবার রাত ১১টা থেকে নিয়মানুযায়ী দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। র্যাবের অভিযানের খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে স্বামীর মোবাইলে ফোন দিয়ে বন্ধ পান নাজমা। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।
নাজমা জানান, সিরাজুল আগে গাউসিয়া এলাকায় একটি সুতার মিলে কাজ করতেন। তিন মাস আগে আজাদ গলিতে নৈশপ্রহরীর চাকরি পাওয়ার পর তাদের (স্ত্রী ও সন্তান) এখানে নিয়ে আসেন। তারা বর্ধনবাড়ি এলাকাতেই থাকেন।
মেয়েকে কোলে নিয়ে উদ্বিগ্ন নাজমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত সোমবার রাত থেকে তার (স্বামী সিরাজুল) কোনো খোঁজ নাই। আমি র্যাবের কাছে গেছি, তারা বলছে, আছে। কিন্তু কই আছে, কিছু বলে না। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে থানায় গেছি জিডি করতে, কিন্তু পুলিশ জিডি নেয় নাই।’
সিরাজুল ইসলামের ছবি দেখিয়ে তার দুলাভাই চাঁন মিয়া বলেন, ‘সিরাজুল নাইট গার্ডের চাকরি করত, তার কী দোষ? তারে যদি ধইরা থাকে, তাহলে কেন ছাড়ে না?’
নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তার আনোয়ার হোসেন (৫) ও আরিফা (১) নামে দুই সন্তান রয়েছে।
এদিকে, ‘কমল প্রভা’য় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর কর্মচারী ছিলেন কামাল (২২)। সোমবার রাত থেকে র্যাবের অভিযান শুরুর পর থেকে তিনিও নিখোঁজ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে কামালের পরিবারের সদস্যরা তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান। কামালের বাবা-মা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রসঙ্গত, ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা ঘিরে ফেলে মিরপুরের মাজার রোডের ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলাবিশিষ্ট ‘কমল প্রভা’ বাড়িটি। ওই বাড়িতে দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ অবস্থান করছিলেন।
গত মঙ্গলবার সারাদিন র্যাব সদস্যরা তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। রাত ৮টার মধ্যে তারা আত্মসমর্পণ করবেন বলেও জানান। কিন্তু রাত ১০টার দিকে তারা আত্মঘাতী হন বলে র্যাব জানায়।
ওই সময় ভবনটির পঞ্চমতলা থেকে পরপর কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। পরে ওই ‘জঙ্গি আস্তানা’য় থাকা কেমিক্যালে আগুন লেগে জীবন্ত দগ্ধ হন ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহসহ সাতজন।
বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি আস্তানায় ইনোসেন্ট (নিরপরাধ) দুই শিশুসহ নারীরা ছিল। তাদের আমরা জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। তবে জঙ্গিদের খুনি যে মানসিকতা সেটাই আবার দেখতে পেলাম। তাদের খুনি মানসিকতার কারণে পরিবার ও শিশুসন্তানও রক্ষা পেল না। সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
জেইউ/এসআর/এমএআর/আরআইপি