ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রোহিঙ্গা সঙ্কটে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে সরকার

ফজলুল হক শাওন | প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্রোতের মতো বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে আছে সরকার। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ কীভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা পুশিংয়ের বিরুদ্ধে নেইপিদোর কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে ঢাকা। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি), মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটসসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখবে।

কুটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতোপূর্বে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকবার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বহুপাক্ষিক আলোচনার চেষ্টা করছে সরকার। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে সমর্থন আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এর আগেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবাধে প্রবেশ করেছে। সরকার তাদের ঠাঁই দিয়েছে মানবিক দিক বিবেচনা করে।

এ ছাড়া সরকার সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছে। এদিকে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মৌসুমী বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারকে মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। তার ওপর রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়টি ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ও অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অাহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নিপীড়নের মুখে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন না করে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমরা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছি এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিয়ানমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি তারা যেন হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে। এটিই হল বড় চাপ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি।

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের স্রোত সামাল দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের প্রবেশের কারণে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভয়ানক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিকভাবে দেখছে। এখন সরকারের নীতি রোহিঙ্গা পুশিংয়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটসসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এই সঙ্কটের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, রোহিঙ্গারা যে অবস্থায় বর্তমানে আছে তা অত্যন্ত অমানবিক। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিচ্ছি। তবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলব তারা যেন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি অনুধাবন করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আমরা সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করছি। কিন্তু কত সাহায্য করা যায়? আমাদের সম্পদেরও তো একটা হিসাব আছে। রোহিঙ্গারা সমস্যায় পড়লেই আমরা তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। কিন্তু বার বার তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা কি সম্ভব? তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বের উচিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নিরীহ ও নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অমানবিক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু এ অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি’র দেশে যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপসহ এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তা দুঃখজনক। এ বিষয়ে বিশ্ববাসীর নজর দেয়া উচিত। বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ নিহতের পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কঠোর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সহিংসতায় রাখাইনে অন্তত ৪০০ রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র সর্বশেষ তথ্য বলছে, গত ১২ দিনে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে একই ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেসময়ও রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। দুই দফার এ সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে বাড়ি-ঘর ধ্বংস ও অত্যধিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এই বিদ্রোহীরা রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

এফএইচএস/বিএ

আরও পড়ুন