আব্দুল্লাহর বাসায় ঘুমিয়েছে সারওয়ার-তামিম-মাহফুজরা
‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর ‘কমলপ্রভা’ ভবনের পঞ্চমতলার বাসায় ঘুমিয়েছে সারওয়ার জাহান, তামিম ও সোহেল মাহফুজদের মতো বড় বড় জঙ্গি নেতারা।
বুধবার বেলা ৩টা ১৮ মিনিটে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জেএমবিতে জড়িত। নব্য জেএমবি প্রতিষ্ঠার পর সে এই সংগঠনে যোগ দেয়। সারওয়ার জাহান যখন জেএমবি ভেঙে আলাদা দল (নিউ জেএমবি) গঠন করে সেই সময় এক শূরা সদস্য গ্রেফতার হয়। সে তথ্য দেয় যে, আব্দুল্লাহ আল-আনসার হিসাব কাজ করছে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, থাকা-খাওয়া ও অর্থ দিয়ে আব্দুল্লাহ সহযোগিতা করত। আমরা আগে তার নাম শুনলেও পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত ছিলাম না।
‘কমলপ্রভা’ ভবনের পঞ্চমতলার বাসায় সে জঙ্গিদের আশ্রয় ও ট্রেনিং দিত। ওই নতুন শূরা সদস্যের দেয়া তথ্যের পর আমরা আব্দুল্লাহকে খুঁজছিলাম। অবশেষ তাকে পাওয়া গেল।
‘বলতে পারি, একটি বিরাট বিপর্যয় থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি’- যোগ করেন র্যাব ডিজি।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯-২০১০ সালের দিকে জেএমবি যখন নড়বড়ে হয়ে যায়, একপর্যায়ে ভেঙে যায় তখন আমরা জানতে পারি কোনো এক আব্দুল্লাহ রয়েছে। সে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের।
সমূলে জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, এ অভিযানের কোনো নাম দেয়া হয়নি। অভিযান শেষ করার আগে আশপাশের বাসা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ঘিরে ফেলা হয় রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ওই বাড়িটি। বাড়িটিতে দুই স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ অবস্থান করছিল। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও মজুদ করে রাখা হয়েছিল।
পরবর্তীতে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা আত্মঘাতী হন। র্যাব সূত্রে জানা যায়, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহর বাবার নাম মৃত মীর ইউসূফ আলী, বাড়ি মেহেরপুরে। তার দুই স্ত্রী- নাসরিন ও ফাতেমা, দুই সন্তান- ওসমান (৯-১১) ও ওমর (৩)। ওই বাসায় আব্দুল্লাহর বোন মেরিনাও অবস্থান করছিলেন। তিনি সোমবার গভীর রাতে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে মেরিনার মাধ্যমে র্যাবের সঙ্গে আব্দুল্লাহর যোগাযোগ স্থাপন হয়।
আব্দুল্লাহর আরেক ভাই (৪৫), তবে তার নাম জানা যায়নি। তিনি কোরআনে হাফেজ বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মুফতি মাহমুদ খান সংবাদকর্মীদের জানান, জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করে রাত পৌনে ১০টার দিকে পরপর বড় চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে র্যাবের চার সদস্য স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন। বিস্ফোরণের কারণে ওই ভবনের আগুন লেগে যায়।
বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল পৌনে ৯টার দিকে ওই বাড়ির ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি অভিযান শুরু করে র্যাব সদস্যরা।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ তার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তারা ধ্বংসাত্মক কিছু করতে পারে কি না- সেই বিষয়ে র্যাবের কড়া নজরদারি রয়েছে। র্যাবও সতর্কাবস্থায় আছে।
এর আগে বাড়িটির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এছাড়া টেলিফোন, ডিস ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়। মানসিকভাবে চাপে ফেলতে এবং তারা (জঙ্গিরা) যাতে বাধ্য হয় আত্মসমর্পণ করতে- এ কারণে এসব করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এরও আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, আব্দুল্লাহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি। তার সঙ্গে আমাদের রাত ৪টা থেকে যোগাযোগ হচ্ছে। তাকে আমরা বিভিন্নভাবে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানাই। তিনি আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছুটা সময় চেয়েছেন।
বেনজীর বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছি। এরপরও তিনি যদি আত্মসমর্পণ না করেন এবং র্যাবের ওপর হামলার চেষ্টা করেন তাহলে আমরা আইনি পদ্ধতিতে অভিযানে যাব।
বাড়িটিতে মোট ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে এরই মধ্যে নারী ও শিশুসহ সব বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ভেতরে কী পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে জানতে চাইলে র্যাব প্রধান বলেন, আমাদের তথ্যমতে ভেতরে ৫০টিরও বেশি দেশীয় তৈরি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি বোমা) রয়েছে। এছাড়া অ্যাসিডসহ বিস্ফোরক তৈরির বিভিন্ন দ্রব্যাদি তার কাছে মজুদ আছে। ছোট একটা পিস্তল আছে বলেও আমরা ধারণা করছি।
টাঙ্গাইলের একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই আস্তানা থেকে জেএমবির দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়। পরে তাদের তথ্য অনুযায়ী রাত ১টায় অভিযান চালিয়ে মাজার রোডের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দক্ষিণে বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ২/৩/বি নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানাটি খুঁজে পায় র্যাব।
জেইউ/এআর/এমএআর/আরআইপি