ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এক লাখ কোটি টাকার সম্পদের মালিক মুসা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮ পিএম, ০৮ জুন ২০১৫

বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের সম্পদের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেওয়া সম্পদ বিবরণী নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানা গেছে। রোববার আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের এই হিসাব জমা দেন তিনি।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, মুসার জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে)।

সম্পদ বিবরণীতে তিনি জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার এ পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ’ (সাময়িক জব্দ) অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় সাতশ কোটি টাকা) অলংকার জমা আছে। দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটো বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে ১২০০ বিঘা জমি রয়েছে।

মুসা বিন শমসের তার সম্পদ বিবরণীতে যে হিসাব তুলে ধরেছেন তার আয়ের উৎস সঠিক কি না সেটা অনুসন্ধান কর্মকর্তা যাচাই করে দেখবেন বলে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন।

সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের বিষয়ে মুসা জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন অস্ত্র এবং ক্রুড ওয়েল ব্যবসা থেকে। তবে সুইস ব্যাংকে তার যে হিসাবটি রয়েছে সেটি যৌথ অ্যাকাউন্ট বলে তিনি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন।

দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সম্পদ বিবরণীতে মুসা বিন শমসের সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলারের যে হিসাব দিয়েছেন তা দুদকের কাছে একটি দালিলিক তথ্য। দুদক এখন তা খতিয়ে দেখবে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুদক এখন সুইস ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ অর্থ সম্পর্কে জানতে চাইবে। তারা বলেন, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকের অর্থসহ যেসব সম্পদের হিসাব দিয়েছেন সেগুলোর বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দুদকের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সুইস ব্যাংকের লকারে মুসার ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের যে অলংকারের কথা বলেছেন সেগুলো বিভিন্ন সময় কেনা হয়েছে এবং উপহার হিসেবে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছে থাকা অলংকারের তথ্যও তুলে ধরেছেন। তবে সেগুলোর দামের বিষয়টি সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়নি।

সম্পদ বিবরণীতে গাজীপুর ও সাভারে তার নামে প্রায় ১২শ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন মুসা বিন শমসের। তার দাবি, স্বাধীনতাত্তোরকালে ওইসব সম্পত্তি ক্রয় করলেও সেগুলো বর্তমানে তার দখলে নেই। এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য (এক বিঘা এক কোটি টাকা হিসেবে) প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া গুলশানে ‘দ্য প্যালেস’ নামে প্রাসাদতুল্য বাড়িটি তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা চৌধুরীর নামে।

বাংলাদেশে নিজের ব্যবসায়িক কাজের তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে সম্পদ বিবরণীতে মুসা জানিয়েছেন, বনানীতে মেসার্স ড্যাটকো লিমিটেড নামে একটি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। এর আরও কয়েকজন অংশীদার রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকায় দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে তার নিজ নামে দেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেননি এ ব্যবসায়ী।

সম্পদের হিসাব দিতে গত ১৯ মে মুসাকে নোটিশ পাঠায় দুদক। বিশেষ বাহক মারফত বনানীতে মুসার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যাটকোতে এই নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ জারির চার দিন পর দুদকের কাছে আরও সাত কর্মদিবস সময় চান তিনি।

এর আগে গত ৫ মে কমিশনের দৈনন্দিন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মুসা বিন শমসেরের নামে সম্পদের হিসাব জানানোর নোটিশ জারির অনুমোদন দেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে তার কোনো অর্থই সুইস ব্যাংকে জমা হয়নি। ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন, যা সুইস ব্যাংকে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

একে