জমে উঠেছে দা-ছুরি ও চাপাতির বাজার
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র দু’দিন বাকি। ইতোমধ্যে রাজধানীতে জমতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। ঈদ সামনে রেখে পশু কেনার পাশাপাশি মাংস কাটার জন্য দরকারি উপকরণ দা-ছুরি-চাপাতি কিনতে কামারের দোকানেও বাড়ছে ভিড়। সঙ্গে গাছের গুঁড়ি এবং মাংস রাখার জন্য পাটির দোকানেও বেড়েছে বিক্রি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ২নং ডিআইটি মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে কামারের দোকান। ওই পথ ধরে পশ্চিম দিকে হাঁটতেই কানে আসবে ঠুং-ঠাং আওয়াজ।
দোকানের পাশেই সামনাসামনি বসে সমানতালে তাতাল লোহা পেটাচ্ছেন দু’জন কামার। একজনের হাতে রয়েছে হাতুড়ি, অপরজনের হ্যামার। কালের বিবর্তনে হাতে টানা হপারের প্রচলন এখন আর নেই। এর স্থানে জায়গা পেয়েছে মোটরের তৈরি বিশেষ মেশিন, যা দিয়ে বাতাস বের হয়।
কামাররা এর নাম দিয়েছেন ‘বুলার’। একটি মোটা পাইপের মধ্য দিয়ে বিরামহীনভাবে বাতাস প্রবেশ করছে কয়লার আগুনে। সেখানে পুড়িয়ে লাল করা হচ্ছে মোটা মোটা লোহার পাত। টিনের চিমনি বেয়ে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে বাইরে। লোহা পুড়ে লাল হতেই সাঁড়াশি দিয়ে ধরে তোলা হচ্ছে রেললাইনের কাটা খণ্ডের ওপর। এরপর শুরু হচ্ছে হাতুড়ির বর্ষণ। চোখের পলক ফেলতেই লোহার পাতটি ধারাল চাপাতি হয়ে যাচ্ছে।
হাতুড়ির আঘাত আর হাতের জাদুতে আগুনে পোড়া কাঁচা লৌহখণ্ড ছুরি-চাকু বা ধারাল বঁটির আকার নিচ্ছে। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাক-ডাকও দিচ্ছেন তারা। ভাই এদিকে আসেন, দেখেন ভাই, ভাল ছোরা, চাপাতি আছে। না নেন, দেখেন ভাই।
এসব বলার ফাঁকে ফাঁকেই জুয়েল, আলাউদ্দিন ও রফিকুলের সঙ্গে কথা হয়। আলাপচারিতায় উঠে আসে কোরবানি ঈদের বাড়তি কাজ আর ব্যস্ততার হালচাল। দোকানদারদের মতে, মাছ ও সবজি কাটার দা-বঁটি ছাড়া সারা বছর তেমন বিক্রি হয় না, ব্যস্ততাও থাকে না। কোরবানি ঈদের সময় এর বেচাবিক্রি বেড়ে যায়। বিক্রি চলে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।
গত তিনদিন ঢাকা মহানগরীর বাদামতলী, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার ও মুগদা বাজারের কামারপট্টিতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দা-বঁটিতে শাণ দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় কারিগরদের সঙ্গে। তারা জানান, বুধবার বিকেল থেকে এ ব্যস্ততা আরও বাড়বে। এ সময় কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকবে না।
আলাউদ্দিন বলেন, কোরবানির জন্য লোকজন দা, ছুরি, বঁটি, ধামা কিনতে এবং পুরনো দা, ছুরিতে শাণ দিতে আসেন। তাই এখন সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা।
কারওয়ান বাজারের রফিক এন্টার প্রাইজের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরা বিক্রি- দুটাই ছিল ভাল। অনেকেই আবার আগেভাগে বানিয়ে নিয়েছেন্। বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে খুচরা বেচা-বিক্রি আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, কোরবানির সময় অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ইতোমধ্যে আমাদের পরিচিত কিছু গ্রাহক দা, বঁটি, ছুরি বানানো এবং শাণ দেয়ার অর্ডার দিয়ে গেছেন। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত আমাদের ব্যস্ততা থাকবে।
রফিকুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওজন ও মানভেদে মাংস বানানোর যন্ত্রপাতির দাম নির্ধারণ হয়। ছয়টি ও পাঁচটির সেট ধরেও বিক্রি হয়, আলাদা আলাদাও বিক্রি হয়। মানভেদে এক-একটি সেটের দাম পড়ে দেড় থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।
‘মায়ের আদর’র মালিক মো. জুয়েল জানান, জাপানি লোহা দিয়ে তৈরি চাপাতি-ছোরার দাম সবেচেয় বেশি। কারণ এটা তাদের বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
পছন্দ মতো উপকরণ বানিয়ে নিতে কারওয়ান বাজারের চলে এসেছেন ধানমন্ডির নওয়াব আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কেনার চেয়ে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিলে মজবুত ও টেকসই হয়। তাই নিজেই কামারের দোকানে চলে এসেছি।
কথা হয় মগবাজার থেকে আসা মো. মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে। প্লাস্টিকের সাদা ব্যাগে ভরে ছোট-বড় কয়েকটি ছোরা, একটি চাপাতি ও বঁটি শাণ দিতে এসেছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ঈদের বাকি দু’দিন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কামারিদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। এ কারণে আগেভাগে চলে এসেছি এগুলো শাণ দিতে।
বিক্রি হচ্ছে গাছের গুঁড়ি ও পাটি
কারওয়ান বাজারের কামার পট্টির পাশেই বিক্রি হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। প্রকার ও সাইজ ভেদে ২০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব। পাটি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এফএইচ/এমএমজেড/আরআইপি