পশুর দরদাম করছেন ক্রেতারা, বিক্রি নেই
বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশুর হাট শুরুর কথা থাকলেও সোমবার থেকেই রাজধানীতে পশু আসতে শুরু করেছে। তবে দুদিন অতিবাহিত হলেও জমেনি গাবতলীর পশুর হাট। অল্পসংখ্যক ক্রেতা পশুর দরদাম করলেও বিক্রি নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলীর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে নামার অপেক্ষায় অসংখ্য গরুভর্তি ট্রাক। হাটের ৮০ শতাংশ অবশ্য পশু দিয়ে ভরে গেলেও এখনও ঢাকার আশপাশের জেলার খামারিরা গরু নিয়ে হাটে আসেনি।
কুষ্টিয়ার খামারি আজমল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল (সোমবার) সকালে ঢাকায় এসেছি ৮ টি গরু নিয়ে। এ পর্যন্ত অনেকে গরু দেখে গেছে। দু-একজন দরদাম করেছেন। দামে না বনায় বিক্রি করিনি। আরও দু-একদিন দেখব।
জামালপুর সদরের খামারি রাশেদ ও তার বাবা হযরত আলী ১২টি গরু নিয়ে সোমবার ঢাকায় আসেন, যার মধ্যে একটিও বিক্রি হয়নি। রাশেদ জানান, হাটে প্রকৃত ক্রেতা নেই। যারা এসেছে তারা অধিকাংশই গরু দেখতে এসেছে। তাই আমরাও প্রকৃত দাম বলছি না। একটু বেশি বেশি বলছি। অনেকে অবশ্য গরুর দাম বলে গেছে, কিন্তু এগুলো আমাদের খরচের চেয়েও অনেক কম। ঢাকায় তো লোকসান করতে আসিনি। দেখি কী হয়।
মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকার অধিবাসী শহীদুল ইসলাম রনি তার ভাইকে নিয়ে গরু কিনতে এসেছেন গাবতলীতে। একটি গরুর দরদামের সময় তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। বাজার পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা গরু ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত বলার পরও বিক্রি করল না। খামারিরা বলে গরুতে ৯ মণ মাংস হবে। ৫০০ টাকা কেজি ধরলে ১ লাখ ৮০ হাজার হয়। এর নিচে কোনোভাবেই দেবে না। আমার মনে হয় তারা এখনই বিক্রির জন্য প্রস্তুত নয়, আরও বাজার দেখবে।
এদিকে প্রতিবারের মতো এবারও গাবতলী হাটে গরুর পাশাপাশি পাকিস্তানের উট এবং সৌদি আরবের দুম্বা উঠেছে। মোহাম্মদপুরের ইমরান শাহ্ খামার গাবতলীতে এবার একমাত্র উট এনেছে, যার দাম চাইছেন ১০ লাখ টাকা। দুম্বার দাম
সর্বনিম্ন ১ লাখ বলছেন খামারিরা। অবশ্য সকালে মিরপুরের পর্বত পিকচার্স খামারের দুটি দুম্বা বিক্রি করেছে প্রতিটি ৮০ হাজার করে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মহিষ নিয়ে গাবতলীতে প্রবেশ করছেন খামারিরা। হাটের দক্ষিণ দিকে সারিবদ্ধভাবে চলছে মহিষের হাট। তবে সেখানেও বিক্রি নেই। কুষ্টিয়ার বিক্রেতা তৈয়ব আলী জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল ৮ টা মহিষ
নিয়ে ঢাকায় এসেছি। এ পর্যন্ত কেউ একটারও দাম করেনি।
গাবতলীতে উঠেছে দেশি ছাগল। আরিচা থেকে ৪৫টি ছাগল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন রমজান মিয়া। এ পর্যন্ত তারও কোনো ছাগল বিক্রি হয়নি। ১৮ কেজির একটি খাসির দাম ১৯ হাজার টাকা হাঁকিয়েছেন তিনি। তবে একজন বিক্রেতা ১৪ হাজার পর্যন্ত দাম বললেও খাসিটি বিক্রি করেননি তিনি।
এবারের পশুর হাটের বাজার ও দাম কেমন হতে পারে তা জানতে অন্তত ছয়জন ক্রেতার সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হয় । তারা জানিয়েছেন, যেহেতু ভারত থেকে প্রচুর গরু এসেছে তাই দাম এবার কম হবে। তবে বলা যায় না, কম দাম পেয়ে যদি কেউ গরু কেনার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় সেক্ষেত্রে হিসাব উল্টে যেতে পারে। তবে যাতে খামারিরা কোনোভাবে লোকসানে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে তারা গরু পালনে বিমুখ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে হাটে গরু আমদানির পাশাপাশি খামারিদের নিরাপত্তায়ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়টি চোখে পড়ে। গাবতলীর হাটের নিরাপত্তা বিধানে দারুস সালাম থানার ইউনিফর্মধারী পুলিশ, সিসিটিভি ক্যামেরা, পুলিশের কন্ট্রোল রুম ও
ওয়াচ টাওয়ার চোখে পড়েছে।
এআর/ওআর/আইআই