ঢাকার পাইকারের অভাবে গ্রামে পশুর দাম কম
গ্রামের হাটগুলোতে এবার কোরবানির পশুর দাম অন্যবারের তুলনায় কম। মাংস বিক্রির জন্য কসাইরা যে দামে পশু কেনেন এর চেয়েও কম দাম বলছেন ক্রেতারা। ফলে অনেক খামারি গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন।
যাদের খুব বেশি প্রয়োজন তারা অনেকেই বাধ্য হয়ে কম দামে পশু বিক্রি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যার কারণে ঢাকার গরুর পাইকাররা এবার গ্রামে যাননি। ফলে স্থানীয় পাইকাররা গরুর দাম খুব কম বলছেন।
কুষ্টিয়া সদরের লালন বিশ্বাস এবার কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য চারটি ষাঁড় পালন করেছিলেন। কিন্তু দাম খুব কম বলায় এবার তিনি ষাঁড় বিক্রি করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে লালন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস আগে যে গরুর দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা সেই গরু এখন ৬০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এছাড়া আগে যেমন পাইকার আসত, এখন আর তেমন কেউ আসছেন না। এছাড়া বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী প্রতিটি গরুর দাম ১০ হাজার টাকা কম বলছেন পাইকাররা। তাই এবার গরু বিক্রি করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় এবার ৫০ ভাগ গরু অবিক্রিত থেকে যাবে। কারণ লোকসান দিয়ে কেউ গরু বিক্রি করবে না। তিনি বলেন, মাংস হিসেবে বিক্রি করলেও গরুর যে দাম আসে এবার তাও আসছে না।
জামালপুরের কামরুজ্জামান চাঁন এবার বিক্রির জন্য ১৫টি গরু পালন করেছিলেন। কিন্ত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনি একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। বন্যার কারণে এলাকায় পাইকারও যাচ্ছে না। যারা এলাকায় কোরবানি দেয় তাদের অনেকের অবস্থা খুব খারাপ। আগে যারা কোরবানি দিত এবার তাদের দেয়ার মতো অবস্থা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা খুব বিপদে আছে কেবল তারাই লোকসানে গরু বিক্রি করছে।
কথা হয় সিরাজগঞ্জ তাড়াসের খামারি সোলেমান প্রামাণিকের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমি আটটি গরু ও চারটি মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি। এক মাস আগে ছয়টি গরু বিক্রি করেছি। মহিষগুলো এখনও বিক্রি করতে পারিনি। যে ছয়টি গরু বিক্রি করেছি তাতে লাভ হয়েছে খুব কম।
তিনি আরও বলেন, এবার গরুর দাম খুব কম। গত বছর পাঁচটি গরু বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা লাভ করেছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাল-ডাল সবই আছে অথচ রান্না করে খাওয়ার জায়গা নেই। এমন অবস্থা তাড়াসের অনেক পরিবারে। প্রতিবার তারা কোরবানি দিলেও এবার কোরবানি দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই তাদের।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট বদলগাছী উপজেলার কোলাহাট। ঈদ মৌসুমে এ হাটে প্রায় সাত থেকে ১০ কোটি টাকার কোরবানির পশু কেনাবেচা হয়। ঈদের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে জেলার বড় হাটগুলোতে ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে। তবে এ বছর বন্যার কারণে পশুর বাজারে ধস নেমেছে। ঢাকার পাইকাররাও আসেননি গ্রামে।
এবারও হাটে প্রচুর গরু-ছাগলের আমদানি হয়েছে। পশুর দাম কম। ব্যবসায়ী, গরু খামারি ও গৃহস্থদের লোকসানের যেন শেষ নেই। এছাড়া অনেক বেকার যুবক যারা কর্মসংস্থানের জন্য পশু পালন করেছে তাদের অবস্থাও করুণ। তবে দাম না ওঠায় অনেককে গরু ফেরত নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
বদলগাছীর কোলাহাটে গরু বিক্রির জন্য এসেছেন ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে ১০টি লাল রঙের গরু পালন করেছি। প্রতিটি গরু ৬০ হাজার থেকে এক লাখ মূল্যে বিক্রি হওয়ার কথা। তবে সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। বন্যার কারণে গরুর বাজার এখন অনেক কম। প্রতিটি গরুতে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো লোকাসান গুনতে হচ্ছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার খামারি দুলাল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, অনেক শখ করে এবার কোরবানির জন্য একটি গরু পালন করেছিলাম। আশা ছিল, গরুটি দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারব। গত ২০ আগস্ট হাটে নিলে গরুর দাম ওঠে এক লাখ ২৫ হাজার। ফের রসুলগঞ্জ হাটে গরুটি বিক্রির জন্য নেয়া হলে দাম ওঠে শুধু ৯০ হাজার টাকা। এ দামে গরু বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে।
তিনি আরও বলেন, রসুলগঞ্জ হাটে প্রচুর গরু কিন্তু ক্রেতা কম।
এফএইচএস/এআরএস/জেআইএম