শিশু ফাতেমা এখন নতুন মায়ের কোলে
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া ছোট্ট শিশু ফাতেমা ঠাঁই পেয়েছে নতুন মায়ের কোলে। তাকে পেয়ে অনেক খুশি নতুন মা আইনজীবী সেলিনা আক্তার। শুধু তিনি নন তার পুরো পরিবারও ফাতেমাকে নিয়ে খুশি। এখন তাকে নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে সেলিনার পরিবার।
মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে আদালতের আদেশ পাওয়ার পর শিশু ফাতেমাকে তার বৈধ অভিভাবকত্ব পাওয়া সেলিনা আক্তারের কাছে হস্তান্তর করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের এডিসি আয়শা সিদ্দিক মিলি জাগো নিউজকে বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে শিশু ফাতেমাকে তার মা সেলিনা আক্তারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেলিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, বেলা ৩টার দিকে ফাতেমাকে হস্তান্তর করেছে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। তাকে পেয়ে আমরা অনেক খুশি। তাকে নিয়ে এখন ব্যাস্ত সময় পার করছি। তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। তাকে যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি।
ফাতেমার নতুন বাবা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ফাতেমাকে পেয়ে আমরা অনেক খুশি।
এর আগে সোমবার ফাতেমার নামে এক্সিম ব্যাংকের একটি শাখায় পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানতের হার) জমা দেন সেলিনা আক্তার। এছাড়া তার সার্বিক কল্যাণসহ শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালনের জন্য আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করেন সেলিনা-আলমগীর দম্পতি।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ জুলাই শিশু ফাতেমার বৈধ অভিভাবকত্বের জন্য আদালতে আবেদন করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ আগস্ট আদালত সার্বিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে ফাতেমাকে আমার (সেলিনা আক্তার) ও আমার স্বামী ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ফাতেমার নামে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর করেছি। এছাড়া তাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর ফলোআপের জন্য আদালতে হাজির করার অঙ্গীকার করছি। আদালতের সার্বিক নির্দেশনা পালন করব। ফাতেমার সার্বিক কল্যাণসহ শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে সব দায়িত্ব পালন করব।
গত ১৬ আগস্ট ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ফাতেমার বৈধ অভিভাবকের জন্য সেলিনা-আলমগীর দম্পতিকে নির্ধারণ করেন।
একই সঙ্গে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে শিশুটিকে আদালত ২২ আগস্ট হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ওই দম্পতিকে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর করারও নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলেন জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম। একই বিমানে শিশু ফাতেমাকে নিয়ে তার মাও ফিরছিলেন। স্বপ্না জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় ওই নারীও একই কাজে সেখানে যান বলে জানতে পারেন স্বপ্না।
স্বপ্না বিমানবন্দর পুলিশকে জানান, ওই নারীও (ফাতেমার মা) জর্ডান থেকে একই ফ্লাইটে ফেরেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হয়ে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না।
এ সময় বিমানে পরিচয় হওয়া শিশুটির মা তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপা আমার বাচ্চাটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি। আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন স্বপ্না। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও সেই নারী আর ফেরেননি।
পরে স্বপ্না বিষয়টি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের জানালে তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠায়। ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
জেএ/এএইচ/আইআই