ইসি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ হওয়ার তাগিদ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৪০ হাজার প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ ইসির কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন দেশের বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন এবং রেডিও’র কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তারা বলেছেন, ইসিকে সক্ষমতা ও সাহস দেখাতে হবে। নির্বাচনের সময় যারা থাকবেন তারা নিরপেক্ষ না হলে শত চেষ্টা করেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। আজ ২৪ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
আগের দিন বুধবার সংবাদপত্রের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করার পর আজ বৃহস্পতিবার টেলিভিশন, অনলাইন এবং রেডিও’র জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মতামত নেয়া হয়।
বৈঠকে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ বলেন, নির্বাচনের সময় মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের নিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনের সময় ফলাফল প্রকাশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষণার আগে যেন কেউ প্রকাশ না করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা যাতে দ্রুত ফল ঘোষণা করেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ঘোর বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনও দেড় বছর বাকি রয়েছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী লাগবে নাকি আনসারবাহিনী লাগবে সেটা আমরা এখনও জানি না। কিন্তু এত আগে সেনাবাহিনীর কথা বলার মধ্যে কোনো মতলবি আছে কি না আমাদের ভাবতে হবে। সেনাবাহিনীর গৌরবকে বিতর্ক করার চেষ্টা কী না চিন্তা করতে হবে।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হবে কী না সেই বিষয়ে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেউ রাজনৈতিক কারণে সেনা মোতায়েনের কথা বললে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেনাবাহিনীতে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে এ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করা যাবে না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সহায়ক সরকারের বিরোধীতা করেন।
বাংলা ভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, বর্তমান বিধান অনুসারে নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে। কাজেই দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচনের রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে সেনাবাহিনী তো দূরের কথা আনসার বাহিনীও প্রয়োজন পড়বে না। মোস্তফা ফিরোজ তার প্রস্তাবনায় জাতীয় নির্বাচনে একাধিক দফায় ভোটগ্রহণ ও নোটিশ দিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর ধর্মীয় নাম বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমির খসরু বলেন, যে নামেই হোক নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকারের দেন। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ভূমিকা পালন করে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন জরুরি।
এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার বলেন, আমরা চাই গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। আর এজন্য ইসিকে তার সক্ষমতা ও সাহস দেখাতে হবে। সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে দায়িত্বে নেই- এই মানসিকতা ত্যাগ করে এখন থেকে দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
দীপ্ত টিভির বার্তা সম্পাদক মাহমুদুল করিম বলেন, নির্বাচনের সময় যে ৪০ হাজার প্রিজাইডিং অফিসার থাকবেন তারা নিরপেক্ষ না হলে শত চেষ্টা করলেও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।
ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে প্রবাসীদের ভোটার করা ও তাদের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত, নির্বাচনী ব্যয় বাস্তবসম্মত করা, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও পোলিং এজেন্টদের অতীত ইসিহাস যাচাই করা, পরাজিত দলের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা, নিবন্ধিত দলের আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকাণ্ডের বাৎসরিক প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিধান চালুর কথা বলেন।
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজ লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি নয়, তাদের কাজ জনগণের আস্থা অর্জন করা। তাদের সেটা করতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী প্রয়োজন পড়বে কি না তারা নিজেরাই সেই বিষয়টি ঠিক করবেন। নির্বাচনের দেড় বছর আগে এসে নতুন কিছু যোগ-বিয়োগ করার কোনো দরকার নেই। এটা করতে গেলে আরও অনাস্থা তৈরি হবে।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের হাতে থাকতে হবে। তিনি বলেন, লেভেল প্লেইং ফিল্ড বা সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ ইসির কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে যারা নির্বাচনে আসবে তাদের সমান সুযোগ দেয়া। সেনা মোতায়েনের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী যত না টানা যায় ততই ভালো।
এসময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-উর-রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/জেডএ/জেআইএম