খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে একতার আহ্বান
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খাদ্য অধিকার ও খাদ্য সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। তবে নয়া উদারবাদী ডিসকোর্স ও ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে মাত্রাতিরিক্ত বাণিজ্য উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও নিয়ম-নীতির শিথিলতা অন্যায্য বাণিজ্য ব্যবস্থা ও কৃষি ক্ষেত্রে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণকে বজায় রাখছে।
পাশাপাশি রাসায়নিক ও শিল্পঘন কৃষিব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শিল্পায়নের জন্য ভূমি দখল ও ভূমি ক্ষয়, কর্পোরেট কৃষি, খনি, বৃক্ষনিধন এবং ভূমির জবরদখল ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে সকল মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষে-মানুষে সংহতি গড়ে তোলা ও ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন ও আ্যালামনাই এসোসিয়েশনে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন ২০১৫’-এর ৩য় ও সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তিন দিনব্যাপি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ২টি প্লেনারি ও ৬টি প্যারালাল অধিবেশন শেষে বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল এ মুহিত, এমপি।
সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলন সাংগঠনিক পরিষদের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ এবং অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন সাংগঠনিক পরিষদের সম্পাদক ও এন্টি পোভার্টি প্লাটফরমের আহ্বায়ক মহসিন আলী।
সম্মেলনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আলোচনার সার-সংক্ষেপ তুলে ধরে সম্মেলনের প্রস্তাবনাসমূহ উপস্থাপন করেন অক্সফ্যামের এডভোকেসি ম্যানেজার মণীষা বিশ্বাস।
এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিগণও সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
সকল মানুষের জন্য সাশ্রয়ী, সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা, সার্ক ফুড ব্যাংক কার্যকরী ও সার্ক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিবেশগত কৃষি ও চাষাবাদের প্রসারে ভূমিকা রাখা, কর্পোরেট প্রযুক্তির প্রসার বন্ধ করা এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয় সম্মেলনের থেকে।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের খাদ্য প্রাপ্তির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে তা নিরসনের দিকে সকলের নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।’
পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষের জন্য শুধু পর্যাপ্ত খাদ্য নয়, মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
‘ভূমি, বন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে মালিকানা বিষয়ক সুশাসন’ শীর্ষক প্লেনারি অধিবেশন-১-এ সভাপতিত্ব করেন হর্স মান্দার, ডিরেক্টর, সেন্টার ফর ইকুইটি স্টাডিজ, ভারত।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার। প্যানেলিস্ট ছিলেন আইএফএসএনের পলিসি এডভাইজার জনাব আলবার্তো গুয়েরা, নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসএম-দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ভারতের ড. উজ্জয়িনী হালিম।
‘খাদ্য অধিকার: দক্ষিণ এশিয়ায় আইনি কাঠামো’ শীর্ষক প্লেনারি অধিবেশন-২-এ সভাপতিত্ব করেন ড. শহিদ মাহমুদ জিয়া, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, রুরাল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আরবিডিসি) পাকিস্তান।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খাইরুল হক। প্যানেলিস্ট ছিলেন ডের্ক বিভেঙ্ক, পলিসি এডভাইজার, ফুড এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ, অক্সফ্যাম নেদারল্যান্ড, নেপালের ড. পূর্না বাহাদুর ও পাকিস্তানের নাসির আজিজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের সুপ্রিম কোট কমিশনারর্স অন রাইট টু ফুড-এর প্রধান উপদেষ্টা বিরাজ পটনায়েক।
এছাড়াও ৬টি প্যারালাল অধিবেশনে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় কর্পোরেট কৃষির বিকল্প, বাংলাদেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা: নারী ও ক্ষুদ্র কৃষকদের কৃষি সেবা সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা; দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকা; বাংলাদেশে খাদ্য অধিকারের আইনগত স্বীকৃতির অগ্রগতি; বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদীভাঙ্গন এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হতদরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এবং বস্তির হতদরিদ্র জনগণের খাদ্য ও পুষ্টিগত নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয় আলোচিত হয়।
এমএইচ/এলএ