আবারও চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সিদ্দিকুর
দৃষ্টিশক্তি হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান ভারতে থেকে দেশে ফিরেছেন। এখন তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষেণে থাকবেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারান সিদ্দিকুর রহমান।
ভারত থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসেন। এরপর গাড়িতে করে চিকিৎসক ও বন্ধু-সহপাঠীরা তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিয়ে যান। এ হাসপাতালের ছয়তলার ভিআইপি কক্ষে রয়েছেন সিদ্দিকুর।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে সহপাঠী শেখ ফরিদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। সরকারি চেষ্টায় সিদ্দিকুরের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্য খারাপ। আমরা বন্ধুকে চোখের আলোয় পাইনি। বন্ধু আমার আমাদের দেখতে পাচ্ছে না। এটা ভীষণ কষ্টের।
তিনি বলেন, আপাতত সিদ্দিকুর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকবেন। দুজন চিকিৎসক এসে দেখে গেছেন।
অাজ বিমানবন্দরে নেমে সিদ্দিকুর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও আমি চোখে এখন আর কিছুই দেখতে পাই না। আমি চোখের আলো হারিয়েছি কিন্তু আমার চোখের বিনিময়ে বন্ধুদের জীবনে শিক্ষার আলো ফিরে আসুক।’
তিনি আরও বলেন, ওইদিন যে অন্যায় আচরণ হয়েছে আমার ওপর, এর জন্য আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুর বলেন, ‘শিক্ষার জন্য আমার এই ত্যাগ। বিনিময়ে বঞ্চিত সকলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা হোক- এটাই আমার চাওয়া।’
গত ২০ জুলাই আন্দোলনে নেমে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন সিদ্দিকুর। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে নেয়া হয়। সিদ্দিকুরের দেশে ফেরা ঘিরে বিমানবন্দরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান তার বন্ধুরা।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ হঠাৎ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, সিদ্দিকুর ডান চোখে আলো দেখছেন না। বাঁ চোখের একদিক থেকে আলো কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন। এরপরই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুরকে ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। সেখানে শঙ্কর নেত্রালয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। ২০ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পরদিনই রাতে এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ২৬।
সিদ্দিকুরের চোখ নষ্ট হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তে গত ২২ জুলাই রমনা বিভাগ পুলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান রমনা বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবাল।
একই ঘটনায় ২৩ জুলাই ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপস) মীর রেজাউল আলমকে প্রধান করে পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলম। তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি উঠে আসে।
জেইউ/জেডএ/পিআর