আমার চোখের বিনিময়ে আলো ফিরুক শিক্ষায়
দৃষ্টিশক্তি হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান ভারতে থেকে দেশে ফিরে বলেছেন, আমার চোখের বিনিময়ে আলো ফিরুক শিক্ষায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি কলেজের রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। শুক্রবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসেন।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সিদ্দিকুর বলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও আমি চোখে এখন আর কিছুই দেখতে পাই না। আমার চোখের বিনিময়ে আলো ফিরুক শিক্ষায়।
‘আমি চোখের আলো হারিয়েছি কিন্তু আমার চোখের বিনিময়ে বন্ধুদের জীবনে শিক্ষার আলো ফিরে আসুক।’
তিনি আরও বলেন, ওই দিন যে অন্যায় আচরণ হয়েছে আমার ওপর, এর জন্য আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কোনো পুলিশ সদস্য যদি বাড়াবাড়ি করে থাকেন তবে সেটা তদন্ত সাপেক্ষে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুর বলেন, ‘শিক্ষার জন্য আমার এই ত্যাগ। বিনিময়ে বঞ্চিত সকলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা হোক- এটাই আমার চাওয়া।’
চিকিৎসকরা চোখের ব্যাপারে কি বলেছেন, সাংবাদিদের এমন প্রশ্নের জবাবে দৃষ্টিশক্তি হারানো এই শিক্ষার্থী বলেন, এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আমি দু’চোখে আর কিছই দেখতে পাই না। চয় সপ্তাহ পরে বোঝা যাতে আদৌ কোনো পরিবর্তন হবে কি না।
রাষ্ট্র বা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কোনো চাওয়া আছে কি না- এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে গিয়ে আমার চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, যাতে আমার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
গত ২০ জুলাই আন্দোলনে নেমে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন সিদ্দিকুর। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে নেয়া হয়।
এদিকে সিদ্দিকুরের দেশে ফেরা ঘিরে বিমানবন্দরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান তার বন্ধুরা।
গত ২০ জুলাই সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে নীতিমালা প্রণয়নসহ সাত দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান।
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ হঠাৎ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এ ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল থেকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, সিদ্দিকুর ডান চোখে আলো দেখছেন না। বাঁ চোখের একদিক থেকে আলো কিছুটা উপলব্ধি করতে পারছেন।
এরপরই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকুরকে চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। সেখানে শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
ওই ঘটনার পরদিনই রাতে ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। মামলা নং ২৬।
সিদ্দিকুরের চোখ নষ্ট হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ তদন্তে গত ২২ জুলাই রমনা বিভাগ পুলিশ পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান রমনা বিভাগের এডিসি (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবাল।
একই ঘটনায় ২৩ জুলাই ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপস) মীর রেজাউল আলমকে প্রধান করে পৃথক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলম। তদন্তে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি উঠে আসে।
এএসএস/জেইউ /এআর/পিআর