ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন ভণ্ডপীর হাবিব পিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০১৭

নিঃসঙ্গ জীবন-যাপনকারী নারীরা ছিল ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ারের মূল টার্গেট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন হাবিব পিয়ার। ভিডিও চ্যাটিংয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কৌশলে বাসায় ডেকে নিতেন। ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন। সে সবের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিতে রাজি না হলে ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিতেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এভাবেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকায় গাড়ি-বাড়িসহ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হাবিব পিয়ার।

সম্প্রতি কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা গ্রেফতার করেন এ ভণ্ডপীরকে। গ্রেফতারের পর দু’দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের কুকর্মের কথা শিকার করে ভণ্ডপীর হাবিব পিয়ার।

আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ভণ্ডপীর বলেন, দুই নারীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সম্প্রতি তিনি পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকার বিনিময়ে দেশ-বিদেশে নারী বিশেষ করে যারা একাকী জীবন-যাপন করে তাদের সঙ্গে ভিডিও চ্যার্টিং করতেন। এছাড়াও সাংসারিক ও পারিবারিক জীবনে যেসব নারী সমস্যায় ভোগছেন তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এভাবেই শতাধিক নারীকে ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও আদালত সূত্র জানায়, নিজের সুন্দর চেহারা এবং ইসলামী জ্ঞানকে অপব্যবহার করে অসংখ্য মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে এ ভণ্ডপীর। বিভিন্নজনকে সাহায্যের ভিডিও ইউটিউবে প্রচার করে নিজের ব্যাংক ও বিকাশ নম্বরে মোটা অংকের টাকা এনে আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

৩ বছরেই গাড়ি-বাড়ির মালিক
তদন্তকারী কর্মকর্তারা আরও বলেন, গত ৩ বছরে এভাবেই গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে এ প্রতারক। তার প্রতারণা কাজে ব্যবহৃত জনতা ব্যাংকের নতুন আরেকটি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কত টাকা লেনদেন হয়েছে সেটা-জানা যায়নি।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, আদালতে নিজের মুখে কুকর্মের বর্ণনা দিয়েছে ভণ্ডপীর।

আরও একটি মামলা হচ্ছে
কাউন্টার টেরোরিজমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল আরও বলেন, ‘এএইচপি’ নামের অনলাইন টেলিভিশন ছিল তার প্রতারণার অন্যতম মাধ্যম। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে প্রতারণা করেছেন। দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী এভাবে টেলিভিশন চালানো যায় না। এজন্য তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বেশ কয়েকজন নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ারকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

পরদিন বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক এ কে এম মাঈন উদ্দিন সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন তাকে আদালতে হাজির করে খিলগাঁও থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

দুদিনের রিমান্ড শেষে শনিবার তাকে সিএমএম আদালতে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম এ কে এম মাঈন উদ্দিন সিদ্দিকী তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগ থেকে জানানো হয়, আহসান হাবিব পিয়ার দাওরায়ে হাদিসে পড়াশোনা করেছেন। নিজেকে এএইচপি টিভির সাংবাদিক বলে পরিচয় দিতেন এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ধর্মের কথা বলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

জেইউ/এআর/এমআরএম/এএইচ

আরও পড়ুন