‘উন্নয়নে ভাসতাছে দেশ, ডুবতাছে রাজপথ’
‘দ্যাখেন, দ্যাখেন উন্নয়নের জোয়ারে কেমনে সব ভাসতাছে। ট্যাকা-পয়সা খরচ কইরা কক্সবাজার যাওনের আর দরকার নাই? দেহেন না, গাড়ি আইলে কেমুন সুন্দর ঢেউ দেহা যায়। উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতাছে দেশ, ডুবতাছে রাজপথ।’
বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় রাজধানীর নিউমার্কেট সংলগ্ন আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এমন খেদোক্তি করছিলেন মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি।
‘কি ভাই, এতো ক্ষেপেছেন কেন’- জিজ্ঞাসা করতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন, ‘আরে ভাই, মাইয়াডারে আজিমপুর গালর্স কলেজে নামাইয়া দিতে মোটরসাইকেল লইয়া নিউ পল্টনের বাসা থাইকা রওনা দিয়া একটু যাইতেই, পানিতে ডুইব্যা সাইলেন্সারের পাইপে পানি ঢুইক্যা মোটরসাইকেল বন্ধ অইয়া গেল। রিকশাওয়ালা ২৫ টাকার ভাড়া চাইলো ৫০টাকা। অহন নিউমার্কেটে আইয়া দেহি সাগরের মতো পানি। কম দুঃখে কি আর এইসব কথা মুখে আহে। কথায় কথায় উন্নয়নের জোয়ারের কথা হুনতে আর বালা লাগে না।’
শুধু মধ্যবয়সী এ ব্যক্তিই নয়, অল্প সময়ের মুষলধারে বৃষ্টিতে নগরীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও রাজপথের বিভিন্ন স্থান বৃষ্টির পানিতে ডুবে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ার ফলে হাজার হাজার মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন।
সকাল থেকে ঝির-ঝির বৃষ্টি হলেও সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আধাঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টির ফলে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, গার্মেন্টর্স কর্মী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে মারাত্মক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় কর্মমুখী মানুষসহ অনেককেই বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা দিয়েই ভিজে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। সেইসঙ্গে বৃষ্টির কারণে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
সকাল থেকে সরেজমিনে লালবাগ থানাধীন আজিমপুর, পলাশী, নিউমার্কেট ও নিউ পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আধঘণ্টার বৃষ্টিতে বহু রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি আর ড্রেনের ময়লা পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের ভাড়া দ্বিগুণ হাঁকায় অনেককেই পানি ভেঙেই গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়।
বৃষ্টির পানিতে নিউমার্কেট গভের্মেন্ট মার্কেটের এক নম্বর গেটের সামনের রাস্তা ডুবে যায়। অনেকে দামি গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে পথে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে পানি অপসারণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় ভ্যানচালকদের আজিমপুর কবরস্থান গেট থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত জনপ্রতি ৫ টাকা হারে লোকজনকে পারাপার করতে দেখা যায়।
বৃষ্টিতে নগরীর এমন দুরাবস্থা ও জলাবদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন পেশার একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত কয়েক বছর যাবত শুধু রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখছেন। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উ্ন্নয়ন হচ্ছে বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। উন্নয়নের নামে নগরীতে জলাবদ্ধতার মাশুল এ সরকারকে দিতে হবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
এমইউ/এসআর/পিআর