তবুও জীবন থেমে থাকে না...
বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা, বৃষ্টি ঝরছে। পুরান ঢাকার নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এক নারী পরিচ্ছন্নকর্মী। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার…, এরপরও তিনি রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ওই নারী পরিচ্ছন্নকর্মীকে এ প্রতিবেদক কৌতূহলবশত জিজ্ঞাসা করেন, তিনি সিটি কর্পোরেশনের কর্মী কি না? তার পাল্টা জবাব- কেন এ প্রশ্ন?
চুল পেকে গেছে, এখনও ডিএসসিসি’র সরকারি চাকরি করছেন কীভাবে, জানতেই এ প্রশ্ন। একথা শুনে ওই নারী হেসে বলেন, ‘আমার বয়স মাত্র ৩৫ বছর। রোদে পুইড়া, বৃষ্টিতে ভিইজ্যা রাস্তাঘাটে ময়লা-পরিষ্কার কইরা অল্প বয়সে চুলে পাকন ধরছে। অভাবে থাকলে মানুষ তাড়াতাড়ি বুড়া হয়’- বলে বেলচা দিয়ে ময়লা তুলতে লাগলেন।
ময়লা তোলা শেষে বললেন, ‘এ ওয়ার্ডের ময়লা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হয়। বিরাট বড় এলাকা, প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঠেলা ময়লা তুলি। সুপারভাইজাররা পরিদর্শনে আইস্যা রাস্তাঘাটে ময়লা দেখলে কমপ্লেইন করে। তাই বৃষ্টিতে ভিইজ্যাই ময়লা তুলতে হচ্ছে।’
বুধবার কাকডাকা ভোর থেকে বৃষ্টি ঝরছে। মুষলধারে না হলেও বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া বের হলেই বিপদ। বৃষ্টি হলেও থেমে নেই জীবন।
বুধবার সকালে সরেজমিন পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, নবাবগঞ্জ, গণকটুলী ও হাজারীবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিবিঘ্নিত আবহাওয়ার মাঝেও নগরবাসীরা নিজ নিজ প্রয়োজনে ঘরবাড়ি থেকে বাইরে বের হয়েছেন। স্কুলগামী শিশুর অভিভাবকদের কেউ ছাতা মাথায় হেঁটে আবার কেউ বাড়তি ভাড়ায় রিকশায় করে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। গার্মেন্টস শ্রমিক, নিম্নআয়ের নারী ও পুরুষদের কেউ কেউ ছুটছেন ছাতা নিয়ে, কেউ ছাতা ছাড়া ভিজে ভিজে। আবার এক হাতে ছাতা মাথায় ধরে অন্য হাতে সাইকেল চালিয়েও অনেককে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দামে শাক-সবজি কিনে রিকশায় করে নবাবগঞ্জ বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন রহিম মিয়া। রিকশার পা-দানি থেকে শুরু করে হুডের ওপর পর্যন্ত শাকসবজির বস্তায় ঠাসা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রহিম মিয়া বলেন, বৃষ্টি-বাদলায় দুর্ভোগ হলেও পেটের দায়ে সাতসকালে বৃষ্টিতে ভিজেই বাসা থেকে বের হয়েছি।
গণকটুলি মেথর কলোনির অদূরে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তা থেকে ইটের সুরকি মাথায় করে সরাচ্ছিলেন তিন তরুণ শ্রমিক। তাদের একজন জানালেন, অদূরে একটি ভবনের ঢালাই হবে আজ। সকাল ১০টার মধ্যে সব ইট সেখানে সরিয়ে নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকাদার। তাই বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নিউ মার্কেট পোস্ট অফিসের সামনে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান। তার মেয়ে আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন মোটরসাইকেলে নামিয়ে দিলেও বৃষ্টির কারণে আজ সেটি বের করতে পারেননি।
হাসানুজ্জামান জানালেন, বৃষ্টির কারণে রিকশার ভাড়া বেড়ে গেছে। রিকশাচালকরা অতিরিক্ত ২০ টাকা নিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই। বেশি ভাড়া হলেও স্কুলে তো যেতে হবে।
চলে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, যত সমস্যাই থাকুক না কেন, জীবন তো আর থেমে থাকে না।
এমইউ/জেডএ/এমএআর/পিআর