সিনেমা হলে দর্শক ফেরানোর ব্যবস্থা করুন : প্রধানমন্ত্রী
চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি অাহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিনেমা হলে যাতে দর্শক ফিরে অাসে সেভাবে ছবি নির্মাণ করুন। জীবন ও সমাজভিত্তিক ছবি নির্মাণ করুন।
তিনি বলেন, সিনেমা হলের পরিবেশ যাতে ভালো হয় সে ব্যবস্থা করছি। হলের মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ডিজিটাল সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
সোমবার বিকেলে চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান-২০১৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ৩১ গুণী শিল্পী ও কুশলীকে পুরস্কার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য ভালো একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করতে চাই। বৃদ্ধ বয়সে শিল্পীরা যাতে অসহায় না হয়। অনেক শিল্পী অাছেন, যারা বৃদ্ধ বয়সে চিকিৎসার টাকা পান না। তাদের জন্য এই ফান্ড সৃষ্টি করতে চাই।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। এই শিল্পের মাধ্যমে সমাজের চিত্র ফুটে ওঠে, সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া যায় এমন ছবি নির্মাণ করুন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র সংক্রান্ত যত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা ক্ষমতায় থাকতে থাকতে সম্পূর্ণ করে ফেলুন। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। ক্ষমতার পালা বদল হলে সব প্রকল্প বাতিল করে দেবে।
তিনি বলেন, ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্র নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উৎসাহিত করেছিলেন। তখনই মুখ ও মুখোশ ছবিটি নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে এফডিসির জন্য জায়গা নির্ধারণ করেন। পূর্ববাংলার মানুষ সিনেমা নির্মাণ করবে এটা শুনে পাকিস্তানিরা অনেক সময় উপহাস করতে। এখানকার সিনেমার নেগেটিভ নিয়ে যাওয়া হতো লাহোরে। পূর্ববাংলার অর্থ লুটপাট করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠান তিনি নির্মাণ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু সিনেমাকে ভুলে যাননি। প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর বাংলাদেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, কালচার ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হয়েছিল। তখনও অামাদের দেশের কিছু তরুণ সমাজকে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে সিনেমা তৈরি করেছে। এজন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সব কাজ করতে পারিনি। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অনেক কাজ সম্পন্ন করেছি। এর অাগে সিনেমায় অপসংস্কৃতি ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। হলগুলোও ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হচ্ছিল। সেগুলো রোধ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দিয়েছি। পরিচালক প্রযোজকদের ট্যাক্স হ্রাস করেছি। চলচ্চিত্রের প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য পুরস্কার দিচ্ছি। যারা এই চলচ্চিত্রকে এতদূর নিয়ে এসেছেন তাদের অাজীবন সম্মাননা দিচ্ছি। চলচ্চিত্রের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। সাভারে অাধুনিক শুটিং স্পট নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে অাবাসিক সুবিধাসহ অান্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ফিল্ম ইনস্টিটিউট নির্মাণ করেছি। কারণ অান্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র শক্তিশালী করতে দক্ষ স্ক্রিপ্ট রাইটার প্রয়োজন। দর্শকের মন, হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, হৃদয়ে গ্রথিত হবে, ছবির রেশটা যেন বাড়িতে গিয়েও থাকে এমন ছবি বানাতে হবে। এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এ বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই গুরুত্ব দেবেন। তাহলে চলচ্চিত্র শক্তিশালী হবে। দর্শক অাবার হলে ফিরে অাসবে।
এফএইচএস/জেএইচ/এমএস