ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত হয় গুলশান হামলার দুই পরিকল্পনাকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৩৯ এএম, ২১ জুলাই ২০১৭

গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান নিহত হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে একটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে মারা যায় চকলেট ও ছোট মিজান। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া সোহেল মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সম্মেলন কক্ষে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অপরাধ বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার এক পর্যায়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম জঙ্গি বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানের নিহত হওয়ার বিষয়টি জানান। সভায় ডিএমপির সব শীর্ষ কর্মকর্তা ও ৪৯ থানার ওসিরা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন বাশারুজ্জামান। সংগঠনের আর্থিক দিক তিনি দেখতেন। ছোট মিজান অস্ত্র সরবরাহে ভূমিকা রাখতেন।

কাউন্টার টেরোরিজম সূত্রে জানা গেছে, নব্য জেএমবির মোস্ট ওয়ান্টেড দুই জঙ্গি বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরও গুলশান হামলায় ও পরিকল্পনায় যুক্ত আর ৫ জন অধরা রয়েছে। তারা হলেন রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, হাদিসুল ইসলাম সাগর, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও জুনায়েদ খান। বর্তমানে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের ৩৬টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ৫০২ মামলায় পুলিশ চার্জশিট দিয়েছে।

গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী গ্রামে আবুর বাড়িতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ অভিযানের পর জানানো হয়, রফিকুলসহ চারজন নিহত হয়েছেন।

২৯ এপ্রিল জানানো হয়, নিহত চারজনের একজন ঝিনাইদহের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া আবদুল্লাহ। তিনি ধর্মান্তরিত মুসলমান। তবে গত ৮ মে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানায়, ধর্মান্তরিত আবদুল্লাহ চাঁপাইনবাবগঞ্জে মারা যাননি, তিনি গত ৭ মে ঝিনাইদহে অপারেশন শাটল স্প্লিটে নিহত হন। গত ৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

সোহেল মাহফুজ জানায়, ৩০ মার্চ মৌলভীবাজারের অভিযানের পর লোকমান হাকিম সোহেল মাহফুজের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাক্ষাৎ করেন। ৩০ মার্চ মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত সাতজনের মধ্যে লোকমান হাকিম ছিলেন না। সেখানে ছয়জন নারী-শিশুর সঙ্গে নিহত ব্যক্তির নাম মাহফুজ। তিনি লোকমান হাকিমের জামাতা।

গতকাল পুলিশের অপরাধ সভায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিহত অপর দুই ব্যক্তি হলেন বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজান। বাশারুজ্জামানের আরেকটি সাংগঠনিক নাম শাহেদ, তিনি নব্য জেএমবিতে ১১ দিনের জন্য আমির ছিলেন।

২০১৫ সালের শেষ দিকে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসিন্দা আবুল হাসনাতের দুই ছেলেকে গৃহশিক্ষক হিসেবে পড়াতেন বাশারুজ্জামান। ওই সময় আবুল হাসনাতের কাছ থেকে উগ্রপন্থায় জড়ানোর দাওয়াত পান তিনি। এক পর্যায়ে তার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। হাসনাতের এক ছেলে সাইফুল হক সুজন সিরিয়ায় আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন। তিনি আইএসের তথ্যপ্রযুক্তি ও হ্যাকিং বিভাগের প্রধান ছিলেন। পরে হাসনাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী বাশারুজ্জামান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে দুই দফায় হুন্ডির মাধ্যমে আসা ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। সেই টাকার একটি অংশ গুলশান হামলার কাজে ব্যবহার করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আস্তানায় শাহেদ পরিচয়ে থাকতের। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার লালপুরে। ধানমণ্ডির একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতেন তিনি।

জেইউ/এআরএস/এমএস