শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করছে সরকার
যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং মান নিয়ন্ত্রণে সরকার নতুন আইন করতে যাচ্ছে। নতুন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। ভাড়া করা ভবনে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেবে না সরকার। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, প্রস্তাবিত এ নীতিমালায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য দশমিক ২০ একর, পৌর এলাকায় দশমিক ৩০ একর এবং মফস্বল এলাকায় দশমিক ৪০ একর জমি থাকার শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। আর মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে দশমিক ২৫ একর এবং গ্রামাঞ্চলে দশমিক ৫০ একর জমি থাকতে হবে। অন্যদিকে মাদ্রাসার ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামাঞ্চলে যথাক্রমে দশমিক ৪৫ একর ও ৬০ একর, এসএসসি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে যথাক্রমে দশমিক ১৫ ও দশমিক ৩০ একর জমি থাকার কথা বলা হয়েছে। এসব জমি হতে হবে অখণ্ড ও বিদ্যালয়ের নামে।
জানা গেছে, বর্তমানে ১৯৯৭ সালের নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এটিকে সংশোধন করে `বেসরকারি উদ্যোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা) স্থাপন, চালুকরণ ও স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় নীতিমালা` নামে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এ নীতিমালা চূড়ান্ত করতে গত ১৮ আগস্ট শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিগগিরই ওই কমিটি আরেক দফা সভা করবে।
নতুন নীতিমালায় মেট্রোপলিটন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ব্যাপারে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বর্তমান নীতিমালায়ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে নিজস্ব জমি থাকার কথা বলা আছে। তবে তাতে ভাড়া করা ভবনেও প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ভাড়া বাড়িতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, প্রস্তাবিত এ নীতিমালা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে কেবল শিক্ষা ব্যবসায়ীরাই মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। সাধারণ মানুষ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আগ্রহী হবেন না।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, নতুন অনুমোদনের জন্য বিদ্যালয়ের নামে নামজারিকৃত জমিতে নিজস্ব ভবন থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রপ্রতি নূ্যনতম এক বর্গমিটার হিসেবে মোট এক হাজার বর্গমিটারের ভবন হতে হবে।
আর ভবনে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পৃথক কমনরুম, পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি, অফিস, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, ছেলে ও মেয়েদের পৃথক টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বিজ্ঞানাগার থাকা আবশ্যক করা হয়েছে। প্রতি কক্ষের আয়তন সর্বনিম্ন ২৪ বর্গমিটার ও সর্বোচ্চ ৩০ বর্গমিটার রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নামে সাধারণ ও সংরক্ষিত- দুই ধরনের তহবিল থাকতে হবে। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক লাখ টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিন লাখ করে ছয় লাখ টাকার তহবিল থাকতে হবে।
অবশ্য ব্যক্তির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণেরও সুযোগ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত বিধিমালায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ জমা দিতে হবে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ব্যক্তির নামে করতে হলে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ১৫ লাখ করে টাকা দিতে হবে। সৌজন্যে : সমকাল