জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়েছেন ফরহাদ মজহার
১৬৪ ধারায় আদালতে দেয়া জবানবন্দির তথ্যই পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানিয়েছেন কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। শুধু তাই নয়, তিনি বলেছেন, ‘ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। এর বাইরে আরও কিছু থাকলে তা যেন তদন্ত করা হয়।’
তদন্তের তথ্য ও ১৬৪ ধারায় দেয়া ফরহাদ মজহারের জবানবন্দির তথ্যে গড়মিল মেলাতে ফের মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় ফরহাদ মজহারকে। সেখানে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশকে একথা বলেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেলা দেড়টার মধ্যে ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বাসায় যান ফরহাদ মজহার। পারিবারিক সূত্রে ও ডিবি পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপহরণের পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ফরহাদ মজহারকে। এরপর তিনি অপহরণের বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ৩ জুলাই ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে তার পরিবার। রাতে আদাবর থানায় মামলাও হয়। তবে ওইদিন রাতেই যশোর থেকে উদ্ধারের পর তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন জাগো নিউজকে বলেন, ফরহাদ মজহার ১৬৪ ধারায় আগে অপহরণ বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছিলেন তা-ই পুনরায় আজ জানিয়েছেন। অপহরণ বিষয়ে অন্য কোনো তথ্য থাকলে তার সঠিক তদন্তও দাবি করেছেন। মামলাটির সব বিষয় নিবিড়ভাবে তদন্ত করে দেখছি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে ডিবি পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, স্ত্রী ফরিদাসহ ফরহাদ মজহার ডিবি কার্যালয়ে আসেন। ফরহাদ মজহারের কাছে অপহরণ সংক্রান্ত তথ্য পুনরায় জানতে চাই। উদ্ধার করা ভিডিও ফুটেজ ও কললিস্ট ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তিনি আগের তথ্যই পুনরাবৃত্তি করে বলেন, এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না। অন্য কোনো তথ্য থাকলে তা যেন সঠিক তদন্ত করা হয়।
বাসায় ফেরার পর যোগাযোগ করা হলে উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর জব্বার মোবাইল ফোনে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন। আগে তিনি যে তথ্য আদালতে দিয়েছেন তাই পুনরাবৃত্তি করেছেন।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন বলেন, ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার করা গেলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত।
আব্দুল বাতেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তারা যে অভিযোগ করছেন তা যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, তিনি অসত্য তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
ফরহাদ মজহার ও তার পরিবার বলছে, ৩ জুলাই শ্যামলীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীকে মোবাইল ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে।
এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্রাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
তবে কীভাবে তিনি যশোর পৌঁছালেন বা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছেন সেসব বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়। ওই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি ঢাকা থেকে স্বেচ্ছায় খুলনায় ভ্রমণ করেন। তবে এখনই এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তাকে ঢাকায় নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
উদ্ধার হওয়ার পরদিন আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সরকারকে বিব্রত করতেই আমাকে চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয়েছিল। কে বা কারা অপহরণ করেছিল, আমি তাদের চিনি না।’
৮ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন, ফরহাদ মজহারের অপহরণের কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত পুলিশ পায়নি। ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় ঢাকা ছাড়েন ফরহাদ মজহার। ফরহাদ মজহার অপহরণের ঘটনায় যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে সেটি ডিবি তদন্ত করছে।
জেইউ/জেএইচ/আরআইপি