ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সরকারি ঘোষণায় আনন্দের বন্যা হিজড়াদের মাঝে

প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ২১ মে ২০১৫

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ হয়েছে হিজড়া লতার। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নিজের অগোচরে শরীরে হিজড়া ভাবটা ফুটে ওঠায় সমাজে অসম্মানিত হতে থাকেন। পরিবারেও অবহেলা। সহ্য না হওয়ায় বাড়ি ছাড়েন তিনি। নাম ছিল সেলিম। সেখান থেকে লতা নাম নিয়ে এলাকার এক নানি হিজড়ার হাত ধরে ঢাকায় আসা লতার।

এখানেই শেষ নয়। ঢাকায় এসে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে অনেক ধরনের পথই চলতে হয়েছে তাকে। কখনো জ্যেষ্ঠ হিজড়াদের কারণে ভিক্ষাও করতে হয়েছে মেধাবী লতাকে। সবই পেটের দায়ে। সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশে হিজড়াদের নিয়োগের বিষয়ে সরকারি ঘোষণায় যারপরনাই খুশি লতা।

রাজধানী মিরপুরের উত্তর পীরেরবাগের একটি বাসায় আরো কয়েকজন হিজড়ার সঙ্গে বসবাস করেন লতা। গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলা সদরে। বৃহস্পতিবার বাসার সামনে গেলে কথা হয় লতার সঙ্গে। ব্যস্ততা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। ডাকতেই পেছন ফিরে তাকিয়ে বলেন, ‘কী বলবি রে’!

বসে চা খেতে খেতে কথা হয়। লতা বলেন, ‘ভাইয়া নিজে তো কখনো ভাবিনি হিজড়া হয়ে জন্মাবো। কী করবো বলো! পড়ালেখায় খারাপ তো ছিলাম না। কিন্তু পড়তে পারলাম না। সমাজের অবহেলা আর পরিবারের সম্মানহানির ভয়ে ঢাকায় এসেছি। চাকরি করতে চেয়েও পারিনি।’

ট্রাফিক পুলিশে হিজড়াদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলেই লতা বলেন, ‘আমি অনেক খুশি ভাইয়া। এবার তো কিছু একটা করে খেতে পারবো। যোগ্যতায় তো আমি কোনো অংশে কম থাকবো না।’

লতার মতো সব হিজড়াই অনেক খুশি। এবার হয়তো আর ভিক্ষা করে করে খেতে হবে না। দ্বারে দ্বারে চাঁদা তুলে জীবিকা নির্বাহ করতে হবে না। হয়তো আর পড়ালেখাও আটকে থাকবে না।

উত্তর পীরেরবাগেই কথা হয় হিজড়াদের নানি মিনুর সঙ্গে। তিনি জানান, বয়স হয়েছে। আর হয়তো বেশি দিন বাঁচবো না। উঠতি বয়সি হিজড়াদের যদি কোনো কর্মসংস্থান হয় তাহলে আর এখনকার মতো মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে না।

তিনি বলেন, হিজড়ারা কি মানুষ না? আমাদেরও যোগ্যতা আছে, পড়ালেখার মন আছে। সুযোগের অভাবে আর তাচ্ছিল্যের কারণে হয়ে ওঠে না। সরকার যদি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পড়ালেখার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেয় তবে পিছিয়ে থাকবে না হিজড়ারাও।

বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পৃথক লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠী। এরপর থেকে তারা শিক্ষা এবং অন্যান্য অধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে শুরু করেছে। ট্রাফিক পুলিশে হিজড়াদের চাকরি দেয়ার বিষয়ে সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে তা ইতিবাচক ধরে মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা। সুযোগ-সুবিধা পেলে পড়ালেখারও আগ্রহ বাড়বে হিজড়াদের।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভের (আরডিসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মেজবাহ কামাল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সবাই লাবণ্য হিজড়ার কথা শুনেছি। কী দূরদর্শিতা নিয়ে ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যাকারীদের জাপটে ধরেছিলেন। তাদের সুযোগ দিলে অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।

ট্রাফিক পুলিশের হিজড়াদের নিয়োগের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ও সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে রাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দিলেও সামাজিকভাবে হিজড়ারা মর্যাদাহীন ছিলেন।

সরকার এবার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক। আমি অত্যন্ত আশাবাদী এবং বিশ্বাস করি, আমাদের এই দেশ গঠনে ও সব সেক্টরে সমানভাবে কাজ করে যাবে হিজড়ারা।

চাকুরির দেয়ার পাশাপাশি বিশেষ সুবিধা দিয়ে যদি ওদের বাসস্থান, শিক্ষা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তবে তারা এ দেশের সম্পদে পরিণত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জেইউ/বিএ/আরআইপি