হলি আর্টিসান হামলার ঘটনাক্রম
গত বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে সংঘটিত হয় দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। এতে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে প্যারা কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ নামে ওই অপারেশনে নিহত হয় ৫ জঙ্গি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক হলি আর্টিসানে ভয়াবহ সেই জঙ্গি হামলার ঘটনাক্রম-
* ১ জুলাই, ২০১৬। রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের অভিজাত হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।
* রমজান মাস ও কূটনৈতিক এলাকা হওয়ার কারণে তুলনামুলক নীরব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে অস্ত্রধারী জঙ্গিদল ফাঁকা গুলি ছুড়ে দেশি-বিদেশি অতিথিদের বেকারিতে জিম্মি করে রাখে।
* রাত ৯টার দিকে আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
* খবর পেয়ে হলি আর্টিসানের সামনে ছুটে যান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও পুলিশের একটি দল।
* হলি আর্টিসানের ভেতরে জঙ্গিরা অস্ত্রের মুখে দুই ডজনেরও বেশি বিদেশি নাগরিক ও কিছু বাংলাদেশিকে জিম্মি করেছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। এ সময় জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করে হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানাতে থাকে পুলিশ।
* কিন্তু পুলিশের অনুরোধ ও সমাগম বৃদ্ধির সময়টাতে বেকারির ভেতরে গুলি করে ও কুপিয়ে ১৭ বিদেশি ও ৩ বাংলাদেশিকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
* বাইরে পুলিশের শক্ত অবস্থানের মুখে পুলিশকে লক্ষ্য করে ভেতর থেকে গুলি বর্ষণ ও বোমা ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করে।
* এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে আসতে শুরু করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি লাইভ দেখাতে শুরু করে বিভিন্ন টেলিভিশন। ঘটনাটি বড় হতে শুরু করে এবং দেশবাসী ততক্ষণে ঢাকায় জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে যায়।
* ভেতর থেকে জঙ্গিদের ছোড়া বোমার আঘাতে ও স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন এবং ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। গুরুতর অবস্থায় রাত সাড়ে ১১টায় ইউনাইটেড হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়।
* এরআগে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করায় ও পুলিশের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ায় রাত ১১টা থেকে ঘটনাস্থল থেকে টিভিতে লাইভ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
* পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাত ১২টায় ঘটনাস্থলের পাশে পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। রাত সাড়ে ১২টা থেকে মাইকিং করে দফায় দফায় জঙ্গিদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা ও তাদের দাবি জানতে চাওয়া হলেও সাড়া দেয়নি জঙ্গিরা।
* রাত ১টায় ঘটনাস্থলে আসে নৌবাহিনীর একটি কমান্ডো দল ও সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিদল। পরে রাত ৩টা থেকে সেনা ও নৌবাহিনী সদস্যদের ঘটনাস্থলে জড়ো হন।
* গভীর রাতে হলি আর্টিসানে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
* জিন্মি উদ্ধার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাব প্রধানসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
* পরদিন ২ জুলাই ভোর ৫টার দিকে ঘটনাস্থল ও আশপাশে থেকে সাধারণ পোশাকের সবাইকে সরে যেতে হ্যান্ডমাইকে অনুরোধ করে পুলিশ।
* সকাল ৭টা পর্যন্ত ১৩ জন মানুষ হলি আর্টিসান থেকে জীবিত বেরিয়ে আসেন। এরপর ৭টা ৪০ মিনিটে প্যারা কমান্ডোরা বেকারিতে অভিযান শুরু করে। ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ নামে এ অভিযান চলে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
* অপারেশন থান্ডার বোল্টে মূলত ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সব জঙ্গিকে নির্মূল করা হয় বলে জানায় আইএসপিআর।
* সকাল ৯টায় হলি আর্টিসানের ভেতরে ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার খবর জানা যায়। তবে তার আগেই নিহত ১৭ জনের
রক্তাক্ত মরদেহের ছবি প্রকাশ করে আইএস।
* কমান্ডো অভিযানে ছয় জঙ্গির নিহতের খবর শুরুতে জানা যায়। সকালে বেকারির আঙিনায় ৬ জনের মরদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাদের মধ্যে একজন হলি আর্টিসানের কর্মী বলে জানা যায়।
* অপারেশনে মোট ১৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যাদের ৫ জন ছিলেন বিদেশি। এছাড়া ৫টি পিস্তল, ৩টি একে-২২ রাইফেল, ৯টি গ্রেনেডের সেইফটি পিন, ৩টি ছোরা, একটি চাপাতি, একটি সাদা রঙের রুমাল এবং বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ৩০০ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
* নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির নাগরিক, ৭ জন জাপানের নাগরিক, একজন ভারতীয় নাগরিক ও ৩ জন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তবে এদের একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান।
* অভিযানে নিহত ৫ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করেন থানার এসআই রিপন কুমার দাস।
* ৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হামলায় আহত বেকারির কর্মী জাকির হোসেন শাওন।
এসআর/এমএস