ব্যাংকঋণে হিমশিম খাচ্ছেন লে. কর্নেল আজাদের পরিবার
সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়ে মৃত্যবরণ করেন র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আজাদের ব্যাংকঋণ মওকুফ চেয়েছে তার পরিবার। বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি।
জানা গেছে, লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর- ১০ শাখা থেকে ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নেন। চলতি বছর ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ঋণ নেন ৪০ লাখ টাকা। দুই ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে প্রতি মাসে ৫৯ হাজার টাকার কিস্তিও দিয়ে আসছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়েছে। কিস্তি পরিশোধ করতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা বলছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ জঙ্গি হামলায় প্রাণই বিলিয়ে দিয়েছেন। এমন এক দেশপ্রেমিকের ব্যাংকঋণ সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ চাইলে মওকুফ করতে পারে।
বুধবার এ ব্যাপারে কথা হয় লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই ইউসুফ হাসান হিমেলের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভাইয়া কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি। বাবা মিরপুর- ২ এর বড়বাগে জমি কিনলেও বাড়ি নির্মাণ করতে পারেননি। ২০০৭ সালে মারা যান তিনি। ভাইয়া দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এজন্য ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর- ১০ নম্বর শাখা থেকে ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নেন। এরপর চলতি বছর ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে ঋণ নেন ৪০ লাখ টাকা। দুই ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে প্রতি মাসে ৫৯ হাজার টাকার কিস্তিও দিয়ে আসছিলেন।
হিমেল বলেন, ভাইয়ার আকস্মিক মৃত্যুর পর সেই ঋণ পরিশোধ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাবার পর ভাইয়াই ছিলেন পরিবারের মূল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এখন তিনি নেই। আমারও চাকরি নেই। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করা দূরের কথা, ঋণের কিস্তি পরিশোধই কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য আম্মা ও আমি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে চিঠি দিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। একইভাবে ভাবিও ট্রাস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ঋণ মওকুফের আবেদন করেছেন।
‘আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, জঙ্গিদের বোমায় মারা গেলেন। এজন্য সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, মানবিক এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’
লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদের মা সায়েদা করিম বলেন, ছেলের অভাব অন্য কিছু দিয়ে পূরণ হবে না। ওকে হারিয়ে যেন আমি আমার চোখের মনি হারিয়েছি। ওর শারীরিক ও মানসিক দুই অভাবই আমি অনুভব করি। সরকারপক্ষ আমার আজাদকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু ওর অবদানের কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তত যেন ব্যাংকের ঋণগুলো মওকুফ কিংবা পরিশোধের ব্যবস্থা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার ‘আতিয়া মহল’ জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত অপারেশন টোয়াইলাইটে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। ঘটনাস্থলের ৩০০ গজ দূরে জঙ্গিদের রেখে যাওয়া বোমা বিস্ফোরিত হলে স্প্লিন্টার তার বাম চোখ ভেদ করে মস্তিষ্কে আঘাত হানে।
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। পরের দিন ২৬ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ও চিকিৎসা শেষে ২৯ মার্চ দেশে ফেরত এনে পুনরায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। ৩১ মার্চ রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৭ জুন ৩৪তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে ইস্ট বেঙ্গেল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। তিনি সেনাসদর, প্রশাসনিক শাখা, জাতিসংঘ মিশন ব্যানব্যাট- ৫ (আইভরিকোস্ট), ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, ১৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন), র্যাব-১২ এর কোম্পানি অধিনায়ক ও র্যাব সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের (টিএফআই সেল) উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর হতে ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
জেইউ/এএইচ/এমএআর/পিআর