ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অভিবাসী তাড়াতে ইন্দোনেশিয়ায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন

প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ১৯ মে ২০১৫

আন্দামান উপকূলে এখনো ভাসছে হাজার হাজার অভিবাসীভর্তি নৌযান। এর বেশির ভাগই বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। তাদের উদ্ধারের জন্য জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বান থোড়াই কেয়ারই করছে না ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। উল্টো অভিবাসীবোঝাই বোটগুলোকে তাদের সমুদ্রসীমা থেকে তাড়িয়ে দিতে তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমান মোতায়েন ইন্দোনেশিয়া।

এ নিয়ে ওই সমুদ্রসীমায় ইন্দোনেশিয়ার মোট চারটি যুদ্ধজাহাজ নিয়োজিত হলো। একই সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া নিজ দেশের জেলেদের নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন সাগরে ভাসতে থাকা নৌযান থেকে আরোহীদের উদ্ধার না করে। ওইসব নৌকা বা নৌযান ডুবতে থাকলেও তাদের উদ্ধার না করতে বলা হয়েছে।

এরই মধ্যে সোমবারও মিয়ানমার উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাত বাংলাদেশিকে। অভিবাসী ঠাঁসা একটি মাছধরা জেলে নৌকা মালয়েশিয়ার দিকে যাওয়ার পথে তাদের পানিতে ফেলে যায়। কেন তাদেরকে ফেলে যাওয়া হলো তা স্পষ্ট নয়। তবে একটি বোটে খাদ্য নিয়ে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে মারামারিতে যে ১০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে খবর দেয়া হয়েছে, এটিও হতে পারে সেরকম।

ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে বাংলাদেশি মোহাম্মদ রফিক একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যাত্রাপথের লোমহর্ষক সব ঘটনার কথা। তিনি বলেছেন, খাবার নিয়ে তাদের নৌকাতেই মারামারি হয়েছিল। এতে অন্তত ১০০ জন নিহত হয়। তাদের কাউকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছে। কাউকে গলায় রশি পেচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাউকে নৌকা থেকে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। ফাঁসি দেয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোয়োনোর ডেমক্রেটিক পার্টির (পিডি) এমপি রুহুত মিতোমপুল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি বোটবোঝাই অভিবাসীদের মানবিক সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার কথায়, আচেহ ও উত্তর সুমাত্রার মধ্যে এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছে। এসব মানুষের দিকে আরো সুনজর দেয়া উচিত ইন্দোনেশিয়ার।

থাইল্যান্ডে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেডের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে মালয়েশিয়া সময় ১১টায় ফোনে কথা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী ভর্তি আরো নৌকা ইন্দোনেশিয়ার দিকে যাচ্ছে। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জেলেরা বলেছেন, তারা কমপক্ষে দুটি নৌকা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের দিকে যেতে দেখেছেন। অভিবাসীবোঝাই নৌযানকে তাড়িয়ে দিতে ইন্দোনেশিয়া তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমান মোতায়েন করেছে। এ সপ্তাহান্তে একটি নৌযান ইন্দোনেশিয়া ভেড়ার চেষ্টা করলে সে দেশের নৌবাহিনী তাদের প্রতিরোধ করে।

ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ফুয়াদ বাসিয়া বলেন, বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে অভিবাসীবাহী নৌযানকে ঠেকাতে মোট চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমান টহল দিচ্ছে। মালয়েশিয়া থেকে মালাক্কা প্রণালী দিয়ে একটি নৌযান এগিয়ে যেতে থাকলে গত সোমবার তাদের থামিয়ে দেন তারা। ওই বোটের সঙ্গে রেডিও যোগাযোগের পর বোটটি ইন্দোনেশিয়ার দিকে ফেরত পাঠানো হয়।

সোমবার মিয়ানমার যে সাত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে সে বিষয়ে কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার ডিকসন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের মাছধরা নৌকা দিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করা হয় ওই বাংলাদেশিদের। এরপর তাদের বাংলাদেশের জেলেদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তারাই কোস্টগার্ডদের খবর দিয়েছেন বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাভর্তি তিনটি বোট সম্পর্কে।

ওদিকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, সম্প্রতি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে অভিবাসীদের গোপন শিবির, গণকবর এবং বহু মৃতদেহ পাওয়ার পর এ নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া এ অভিবাসীদের বহনকারী নৌকাগুলো তীরে ভিড়তে দিচ্ছে না। তবে কয়েকশ’ লোক ইন্দোনেশিয়ার আচেহতে শিবিরে আশ্রয় পেয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ নিজ দেশের জেলেদের বলে দিয়েছে যেন শুধু কোনো নৌকা ডুবে যেতে থাকলে বা লোকজন সাগরে পড়ে গেলেই তাদের সাহায্য করা হয়।

এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে ভাসমান এসব বোটে আটকে পড়া মানুষের বিষয়টি কোনো সরকারই আন্তরিকভাবে নিচ্ছেন না। মালয়েশিয়ায় প্রবেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমুদ্র সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। থাইল্যান্ডের কাছে যেসব নৌযান আটকা পড়ছে তারা দ্রুত তার ইঞ্জিন মেরামত করে ঠেলে দিচ্ছে গভীর সমুদ্রে। যদিও ওইসব নৌযানে রয়েছে অনাহারে ও অসুস্থতায় মৃত্যুমুখে অনেক মানুষ।

আবার ইন্দোনেশিয়াও অভিবাসীদের দূরে ঠেলে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এ জন্য তারা মিয়ানমারকে দূষছে। কিন্তু মিয়ানমার তার দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু এখন যা প্রয়োজন তা হলো এসব অভিবাসী কারা, এর জন্য দায়ী কে সে চিন্তা না করে তাদের জীবন রক্ষা করা।

অভিবাসীদের আশ্রয় না দেয়ায় তিন দেশের সমালোচনায় জাতিসংঘ :
সমুদ্রে দিনের পর দিন ভাসতে থাকা অভিবাসীদের ঢুকতে না দেওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রতি ফের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের নিন্দার মুখে এ তিনটি দেশ সাগরে চলমান এ সঙ্কটের মধ্যে মানবপাচার রোধে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।

বুধবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এ তিন দেশ সাগরে ভাসা অবৈধ অভিবাসীদের ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএইচসিআরের মুখপাত্র ভিভিয়ান তান বলেছেন, এটা একটা খারাপ ইঙ্গিত।

দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ দেশগুলো আশ্রয়প্রত্যাশী মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ায় আন্দামান সাগরে এক মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যেসব নৌকাকে কূলে ভিড়তে দেওয়া হচ্ছে না, তার মধ্য থেকে যে কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন, তারা খাদ্য নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কথা জানিয়েছেন।

ইন্দোনেশিয়া শুরুতে নমনীয় হলেও এখন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবৈধদের কোনো সহায়তা না করতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের বলা হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বিবিসিকে  এ কথা বলেন, তারা খাবার দিতে মানা করেননি। তবে কাউকে তীরে আনতে জেলেদের মানা করে দিয়েছে।

তবে জেলেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সাগরেভাসা এসব মানুষকে কোনো সহায়তাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে গত এক সপ্তাহে যে দেড় হাজার মানুষ স্থানীয়দের আশ্রয় পেয়েছে, তারাও খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে বলে ভিবিন্ন গণ  মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় এক মানবপাচারকারী গ্রেপ্তার :
থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় এক মানবপাচারকারী গ্রেফতার হয়েছে। পাচারকারী চক্রের গড ফাদার হিসেবে পরিচিত পাচু বাং কো-তং আনচোতিপাংকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানী ব্যাংককে এক সংবাদ সম্মেলনে পাচু বাংকে গ্রেফতারের কথা জানান দেশটির পুলিশ প্রধান জেনারেল সমইউথ পুনপাংওঁ।

মানবপাচারকারী হিসেবে সম্প্রতি যে, ৬৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাচু বাং। পাচু বাং তার নিজ প্রদেশ সাতুন থেকে প্রায় ৯শ’ কিলোমিটার দূরে ব্যাংককে এসে আত্মসমর্পণ করেন।

পাচু বাং থাইল্যান্ডের সাতুন প্রদেশের প্রধান বা হেড অব প্রভিন্স ছিলেন। পাচু বাং রাজনীতিবিদ হলেও পেশায় ব্যবসায়ী। তার মালিকানায় অনেকগুলো জাহাজ, নৌকামোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সপ্তাহ দুয়েকে আগে সাতুন প্রদেশের আরো এক ব্যবসায়ী আবু হাওয়ারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হন সাতুন প্রদেশের পু ইউ সাব-ডিস্টিক্ট মেয়র মা লে তোং দিন। এ নিয়ে মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত ৬৫ জনের মধ্যে ৩১ জন গ্রেফতার হলেন।

বিএ/পিআর