হাতিরঝিলে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় যেভাবে কাজ করছে পুলিশ
ঈদুল ফিতরের কারণে রাজধানী বলতে গেলে অনেকটাই ফাঁকা। ঈদ করতে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গেছেন লাখো মানুষ। অার রাজধানীতে যারা রয়েছেন তারা দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঈদ উল্লাসে মেতেছেন। সবচেয়ে বেশি ভীড় লক্ষ্য করা গেছে হাতিরঝিলে। নগরীর ঈদানন্দের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে যেন হাতিরঝিল। হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রেমীদের কঠোর নিরাপত্তায় কাজ করছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
রাজধানীবাসীর ঘুরতে যাওয়ার পছন্দের স্থান এখন এই বিনোদনকেন্দ্র। ঈদের দ্বিতীয় দিনও বিকেল থেকে নগরবাসীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা হাতিরঝিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলে বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা। বাড়তে থাকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির উৎসব। নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে চক্রাকার বাস, ওয়াটার বোট। নামানো হয়েছে নতুন করে স্পিডবোড। পরিচ্ছন্ন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে আকর্ষণ করে ঈদমুখর মানুষকে। পুরো হাতিরঝিলে পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
হাতিরঝিল এলাকার ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তার ভয় না থাকায় এবার হাতিরঝিলে মানুষের সমাগম তুলনামূলক বেশি। পুরো এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মোতায়েন রয়েছেন। রয়েছেন গোয়েন্দা সদস্যও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পুরো হাতিরঝিলে মানুষের কোলাহল। পরিবার নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে নগরীর বেশিরভাগ মানুষের গন্তব্য হয়ে উঠেছে এই বিনোদনকেন্দ্র। দুপুরের আগেই টইটুম্বর হয়ে যায় পুরো এলাকা। যেন পা ফেলা ভার। হাতিরঝিলের বিশেষ আকর্ষণ ওয়াটার বাসে চড়ে লেকে ভাসার আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি হরেক রকম সৌন্দর্যে বিমোহিত দর্শনার্থীরা।
আগত বিনোদনপ্রেমীরা কেউ রেলিং ধরে মুহূর্তটিকে স্মৃতিময় করে রাখতে সবাই মিলে ছবি তুলছেন, কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে এক ক্লিকে নিজেদের ফ্রেমবন্দি করছেন সেলফিতে। অনেকে আবার বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে পিকআপে চড়ে নেচে-গেয়ে হৈ-হুল্লোড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন হাতিরঝিলের চারপাশ।
কেউ আবার ঝিলের পাড়ে বসে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছেন। সবার চোখে-মুখেই ঈদ আনন্দের ছাপ। ব্যস্ত নগরীতে স্বস্তির জায়গা হিসেবে পরিচিত হাতিরঝিলে সন্ধ্যার পর যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে ওয়াটার ডেন্স শুরু হলে মানুষের চাপ নিমিষেই যায় বেড়ে। সন্ধ্যার পরই হাতিরঝিল সাজে রঙিন রূপে। চোখ ধাঁধাঁনো রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো হাতিরঝিল। রঙবেরঙের দৃষ্টিনন্দন বাতি হাতিরঝিলকে এনে দিয়েছে নজরকাড়া সৌন্দর্য।
পুরো হাতিরঝিলের চক্রাকার রাস্তা আধা ঘণ্টা পর স্থিমিত হয়ে পড়ে। রাস্তার উপর অধিকাংশ যানবাহন দাঁড়িয়ে যায়। সবাই যানবাহনের গ্লাস নামিয়ে ওয়াটার ডেন্স দেখা শুরু করে। অসংখ্য বিনোদনপ্রেমী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পানির নৃত্যখেলা অবলোকন করতে থাকে। তাই ঈদের দিনে যারা হাতিরঝিলে ঘুরতে পারেননি তারা মিস করলেন বটে।
সকাল থেকেই ওয়াটার বোটে ওঠার জন্য শত শত মানুষকে লাইনে থাকতে দেখা যায়। ওয়াটার বোটের টিকিট কিনতে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। কেউ কারোর চেয়ে কম নয়। টিকিট সবার চাই-ই-চাই।
চক্রাকার বাসের টিকিট দিয়েও সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কাউন্টারে কর্মরতরা। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে লাইনে। কিন্তু মানুষের চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা একেবারেই কম। তাই টিকিট দিতেও ভয় কাউন্টার ম্যানেজারদের।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মোবশ্বেরা হাবিব খান জাগো নিউজকে বলেন, ঈদে হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় হয়। তাই এবার পুরো হাতিরঝিল এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হয়েছে। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যও।
যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) সুমন কান্তি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় হাতিরঝিলের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল ও সন্দেভাজন গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। চেকপোস্ট ও টহল বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পুরো রাজধানীতে ঈদ উৎসব উপভোগ করবেন বিনোদনপ্রেমীরা।
জেইউ/জেডএ