ছাদে যাওয়া ঝুঁকি, তবুও শেকড়ের টানে...
টিকিট পাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে। এরপরও কোনোমতে বাড়ি পৌঁছে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যেতে পারলেই যেন উবে যায় যাত্রাপথের সব ভোগান্তি আর দুর্ভোগ।
তাই তো শেকড়ের টানে ট্রেন-বাসের ছাদে কিংবা ঝুলে অথবা ট্রাকে চড়ে ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথ ধরছেন রাজধানী থেকে ঘর ফেরত যাত্রীরা।
ঈদযাত্রার অন্যান্য দিনের মতো শনিবার রেলওয়ের প্রধান হাব কমলাপুর স্টেশনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদ যাত্রায় শত ভোগান্তি-দুর্ভোগ থাকলেও সবার চোখে-মুখেই রয়েছে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার এক আকুলতা।
নিজের জন্মভূমি, চিরচেনা মাঠ-প্রান্তর কিংবা বটগাছের তল হয়ে এগিয়ে যাওয়া সড়কটির সঙ্গে মিশে থাকা ফেলে আসা নানা স্মৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে এসব মানুষকে। অবশ্য কেউ যাচ্ছেন মায়ের কিংবা বাবার জন্মভিটেতে, স্বজনদের নিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকেই স্টেশনজুড়ে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো প্রত্যেকটি ট্রেন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ছাদেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
ঝুঁকি উপক্ষো করে ট্রেনের বগির মাঝের অংশেও বসছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার অগ্রিম কেটে নেয়া টিকিট হাতে নিয়ে অপেক্ষায় আছেন কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের আশায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে কমলাপুর স্টেশন থেকে এখন দৈনিক পৌনে এক লাখ যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। ৩১ টি আন্তঃনগর ও স্পেশাল ছাড়াও লোকাল এবং মেইল ট্রেন মিলিয়ে এখান থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটে চলছে ৬৭ টি ট্রেন।
প্রত্যেকটি ট্রেনের কয়েকগুণ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে। শনিবার সবচেয়ে বেশি যাত্রীর চাপ দেখা গেছে দিনাজপুরমুখী একতা এক্সপ্রেসে।
আন্তঃনগর এ ট্রেনটিতে যাত্রী চাপ এতটাই বেশি যে ট্রেনের ভেতরে উঠতে না পেরে ছাদে বসেই রওনা দিচ্ছেন অনেকে। ছাদেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। নারী-পুরুষ ছাড়াও বিভিন্ন বয়সীদের উঠতে দেখা গেছে, রয়েছে শিশুও।
ওই ট্রেনের ছাদে বসা যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে, আগে টিকিট কাটেননি। স্টেশনে এসেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই ছাদে মা-বাবার কাছে যেতে উঠেছেন তিনি।
বললেন, ট্রেনের ভিতরে জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়েই ছাদে উঠেছি। যদিও জানি ছাদে এতদূরের পথ যাওয়া রিক্স (ঝুঁকি) থাকে। তবুও যেতে তো হবেই, অনেকেই উঠেছে।
সাইদুর বলেন, ঈদে বাড়ি ফিরতে পদে পদে ভোগান্তি তবুও শেকড়ের টানে শত বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে স্বজনদের কাছে পৌঁছাতে পারলে এসব আর মনে থাকে না। তখন মনে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করে।
স্ত্রী ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন আরেক যাত্রী রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিবছর পরিবার- পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাই। এই ঈদেই সবাই এক হয়। দূর-দুরান্ত থেকে নাড়ির টানে যাচ্ছি বাড়িতে। আর এটাই হলো শেকড়ের টান।
ট্রেনে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী ছাড়াও রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। যে কোনো ধরনের যাত্রী হয়রানি দেখা গেলেই তা প্রতিরোধ করা হবে।
এদিকে শনিবার উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৯ টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও এসে ঢাকায় পৌঁছায়নি।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ট্রেনের বিলম্ব হয়েছে যে কারণে কমলাপুর পৌঁছাতে আরো কিছু সময় লাগবে।
স্টেশনে রাখা ডিসপ্লে দেখা যাচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার সম্ভব্য সময় দেখানো হচ্ছে ১২ টা ৪০ মিনিট। আর এই বিলম্বে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই ট্রেনের হাজারো যাত্রী।
অগ্রিম টিকিটের ট্রেন ছাড়াও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরমধ্যে
দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল:
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।
চাঁদপুর স্পেশাল-১:
চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।
চাঁদপুর স্পেশাল-২:
চট্টগ্রাম- চাঁদপুর -চট্টগ্রাম, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।
রাজশাহী স্পেশাল:
রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।
পার্বতীপুর স্পেশাল:
পার্বতীপর-ঢাকা-পার্বতীপুর, ২৩ থেকে ২৫ জুন ও ২৮ জুন এবং ৩ জুলাই।
শোলাকিয়া স্পেশাল-১:
ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ- ভৈরববাজার, পবিত্র ঈদের দিন। শোলাকিয়া স্পেশাল-২: ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ, ঈদের দিন।
এএস/এমএমএ/জেআইএম