জাতীয় ও শোলাকিয়াসহ বড় ঈদগাহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
রমজান শেষ পর্যায়ে। ক’দিন পর খুশির ঈদ। এবার ঈদুল ফিতরে জাতীয় ও শোলাকিয়াসহ সারাদেশের বড় বড় ঈদ জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বছর রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টেুরেন্টে হামলার রেশ না কাটতেই ৭ জুলাই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশ পথে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে নিহত হন মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই কনস্টেবলসহ চারজন। ওই ঘটনায় আরও অন্তত দশজন আহত হন।
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপে বিভিন্ন জঙ্গি আস্তানায় অভিযান এবং তাদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে মারা গেছে ৩০ জনেরও বেশি জঙ্গি সদস্য।
এবার রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠে সামিয়ানা টানানো, মাইক, ফ্যান, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার ৯০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। ৮৫ হাজার পুরুষ ও পাঁচ হাজার নারীর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
দুই লাখ ৬০ হাজার বর্গফুটের জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ। কয়েকশ বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়েছে। সাজসজ্জার কাজও শেষ। ঈদগাহ এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ-র্যাবের দুটি আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষও তৈরি করা হয়েছে। ময়দানের মূল ফটকের পাশেই বসানো হয়েছে ১২০টি অজুখানা। শুধু ঈদগাহ মাঠে বসানো হয়েছে পৌনে ১০০ সিসিটিভি ক্যামেরা।
রাষ্ট্রপতিসহ বিশিষ্টজন ঈদের নামাজ পড়তে আসবেন হাইকোর্টের প্রধান ফটক দিয়ে। সর্বসাধারণের জন্যও খোলা থাকবে ঈদগাহ ময়দানের প্রধান ফটক। প্রধান ফটকে নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভিআইপিদের জন্য ঈদগাহের ভেতরে প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জায়গা আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকবে। মাজারের রাস্তাটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা হয়েছে।
অন্যদিকে, শোলাকিয়া ঈদ জামাতেও নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যাপক সংখ্যক পুলিশসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম মাঠের চারদিকে অবস্থান করবে। পাশাপাশি বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক চৌকস দল নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন জানিয়েছে।
মাঠ কমিটির সম্পাদক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, ঈদের দিন সকাল থেকে কিশোরগঞ্জ ও আশপাশ এলাকাসহ দূর-দূরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা শোলাকিয়া মাঠে আসবেন। তাদের যাতায়াতের সুবিধায় ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বৃহত্তম ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা লাগিয়ে কিশোরগঞ্জ শহর নতুনরূপে সাজানো হবে। জেলা প্রশাসন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মুসল্লিদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, এবারের জামাতের নিরাপত্তায় ৫০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যা ব ও গোয়েন্দা পুলিশ থাকবে। পুরো শোলাকিয়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। আগের রাত থেকে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে ঈদগাহ মাঠ তল্লাশি করা হবে। মাঠের ২৮টি গেটে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি করে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হবে।
তিনি জানান, দৃশ্যমান এসব নিরাপত্তা ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ বছর ঈদ জামাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এবার শোলাকিয়া ও কেন্দ্রীয় ঈদ জামাতসহ সারা দেশের বড় বড় ঈদগাহে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, এবার যেন দেশবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদেই ঈদ উদযাপন করতে পারেন সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে কোনোরকম নাশকতা চালানোর সাহস দুর্বৃত্তরা পাবে না বলেও জানান তিনি।
জেইউ/জেডএ/এমএআর/পিআর