কারো পেটে লাথি দিয়ে নগরের উন্নয়ন হতে পারে না : সাঈদ খোকন
সাঈদ খোকন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র। তার আরেকটি পরিচয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজ-এর মুখোমুখি হন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু
জাগো নিউজ : নির্বাচিত হওয়ার পর ‘ঢাকা ডায়ালগ’-এর মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করার কথা। কবে করছেন ঢাকা ডায়ালগ?
সাঈদ খোকন : ১৭ মে (রোববার) বোর্ড মিটিংয়ের পর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলো। এরপরেই ‘ঢাকা ডায়ালগ’-এর আয়োজন করা হবে, তবে তা দ্রুতই করবো ইনশা আল্লাহ।
জাগো নিউজ : শপথ নেয়ার পর নগর ভাবনায় বিশেষ কোনো পরিকল্পনা গুরুত্ব পেল?
সাঈদ খোকন : নগর উন্নয়নে সব কাজই বিশেষ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হবে। তবে এই মুহূর্তে যে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি তা হচ্ছে, ময়লার জন্য বাসা বাড়িতে ব্যাগ সরবারহ করা।
জাগো নিউজ : কতোগুলো ব্যাগ সরবরাহ করবেন?
সাঈদ খোকন : এক লাখ ৪৩ হাজার ময়লা ফেলার ব্যাগ সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাগো নিউজ : এটি যথেষ্ট মনে করছেন?
সাঈদ খোকন : না, আমার এলাকায় আট লাখের ওপরে বাড়ি রয়েছে। তবে শুরু করতে যাচ্ছি, এটিই এখন বিশেষ পরিকল্পনা।
জাগো নিউজ : ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে, পরিছন্নতাকর্মীও রয়েছে। ব্যাগ কেন দিতে হচ্ছে?
সাঈদ খোকন : ব্যাগ না থাকার কারণে দেখবেন, আপনার বাসাতেই ময়লা রাখার সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। পরিছন্নতাকর্মী নিচ্ছে বটে, তবে ছড়ানো, ছিটানো গোটা শহরেই ময়লা ফেলে রাখে। উন্নত শহরগুলোতে এই চিত্র দেখতে পাবেন না। তারা নির্দিষ্ট ময়লার ব্যাগ কিনে নিয়ে সেখানে ময়লা রাখে। ব্যাগ কিনে ময়লা রাখার মানসিকতা আমাদের এখনো তৈরি হয়েছে বলে মনে করি না। এ কারণেই প্রথমে ব্যাগ সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। বাড়িতে বাড়িতে ময়লা সংগ্রহ করে পরে ডাম্পিং করা হবে।
জাগো নিউজ : নগরভবন দুর্নীতির আখড়া বলে পরিচিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার অবস্থান কী?
সাঈদ খোকন : সিটি কর্পোরেশন দুর্নীতি করার সুযোগ মেলে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই ই-টেন্ডারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এরপর আর একটি টেন্ডারও অনলাইনের বাইরে আহ্বান করা হবে না। এটি করতে পারলে দুর্নীতি ঠেকানো যাবে বলে বিশ্বাস করি।
জাগো নিউজ : এরপরেও তো...
সাঈদ খোকন : অন্তত প্রকল্প, ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ঠেকানো যাবে। একদিনেই তো সব সম্ভব হবে না। এর মধ্য দিয়ে বড় দুর্নীতি ঠেকানো যাবে।
জাগো নিউজ : সিটি ভবন রাজনৈতিক দলের অফিস বলেও পরিচিত পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণ নেতাকর্মীদের চাপ থাকেই। আপনিও তরুণ। এ চাপ কীভাবে সামলাবেন?
সাঈদ খোকন : চাপ থাকবেই। এ চাপ আমি আমলে নিচ্ছি না। আজ একটি ওয়ার্ডে গিয়েছিলাম, যেখানকার কাউন্সিলর বিএনপি সমর্থিত। আমি তাকে সঙ্গে নিয়েই এলাকার উন্নয়নের কথা বলেছি। তার সঙ্গেই আগে দেখা করেছি। আমার নিজ দলের কর্মীরা আসতেই পারে। কিন্তু নগরভবন থেকে তারা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবে না। দলমত নির্বিশেষে আমি সবার হয়ে কাজ করতে চাই।
জাগো নিউজ : রাজনীতির এমন সময়ে দল এড়িয়ে কাজ করা আদৌও সম্ভব হবে?
সাঈদ খোকন : দল এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে না। কিন্তু নগর উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে, সবাইকে পাশে পেতে চাই। কাজের বেলায় কোনো দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাবে না, এ বিশ্বাস আমার আছে। ‘রাজনীতি যার যার, নগরভবন সবার’ এটিই আমার নির্বাচনী স্লোগান।
জাগো নিউজ : একই প্রশ্নে সাবেক মেয়রদের সহযোগিতা কতোটুকু প্রত্যাশা করছেন?
সাঈদ খোকন : সাবেক দুই মেয়র আমার বাবার বয়সী। অন্য দলের হলেও তারা আমার বাবার সময় থেকে রাজনীতি করে আসছেন। নির্বাচনের আগে মির্জা আব্বাস চাচার স্ত্রী আফরোজা চাচি আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমার বিশ্বাস তারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। নগর নিয়ে তাদেরও ভাবনা ছিল, কাজ করেছেন। অবশ্যই তাদের অভিজ্ঞতা আমার উন্নয়নে কাজে লাগবে। আমি তাদের সঙ্গে নিয়েই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো।
জাগো নিউজ : উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের সমন্বয়ের কোনো অভাব দেখছেন কি-না?
সাঈদ খোকন : না আমি এখনো কোনো সমন্বয়ের অভাব দেখছি না। উত্তরের মেয়র যিনি, তিনি আমাকে ছোট ভাই হিসেবেই জানেন। কোনো সমস্যা হবে বলেও মনে করি না।
জাগো নিউজ : যানজট নিরসনে উত্তর যে পরিকল্পনা নেবে দক্ষিণ সেভাবে নিতে পারবে না। উত্তরের রাস্তার সঙ্গে দক্ষিণের রাস্তার তুলনা চলে না। এখানে সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে কি-না?
সাঈদ খোকন : এটি ভিন্ন বিষয়। একে সমন্বয়ের অভাব না বলে সমস্যা বলাটাই যুৎসই হবে বলে মনে করি। উত্তর উত্তরের সমস্যা দেখবে, আর আমরা দক্ষিণের সমস্যা দেখবো। এক্ষেত্রে যৌথ সিদ্ধান্তের ব্যাপার আসলে তো অবশ্যই সমন্বয় করা হবে। আমরা পুরো ঢাকাকেই উন্নয়নের নগরী করার চেষ্টা করবো।
জাগো নিউজ : উত্তর টাকা পায় দক্ষিণের কাছে। কতো টাকা পায়?
সাঈদ খোকন : প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা দক্ষিণের কাছে উত্তর পাবে। এটি আমরা কাভার করতে পারবো ইনশা আল্লাহ।
জাগো নিউজ : আপনি সমন্বিত কর্তৃপক্ষের কথা বলছেন। বিষয়টি যদি পরিষ্কার করতেন?
সাঈদ খোকন : সিটি কর্পোরেশন ২২টি মন্ত্রণালয় এবং ৫৬টি অধিদফতরকে নিয়ে কাজ করে থাকে। এখানে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মনে করি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি সমন্বিত কর্তৃপক্ষ গঠন করার পরিকল্পনা আছে। এটি হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা সম্ভব হবে। যারা আসছেন তারাই সহযোগিতার কথা বলছেন।
জাগো নিউজ : নগর পরিচ্ছন্ন রাখেন যারা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয় না। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। আন্দোলনও হয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না?
সাঈদ খোকন : আমি তাদেরকে বলেছি, আমি পরিচ্ছন্ন ঢাকা চাই। এর জন্য তোমরা যা চাইবে তাই পাবে। এখানে আমি একেবারে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছি। তাদের ভাগ্য উন্নয়ন না করে নগরের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
জাগো নিউজ : যানজট নিরসনে পরিকল্পনা কী?
সাঈদ খোকন : এখানে আমি প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে পারি মাত্র। আমি ডিএমপি কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আপনারা উদ্যোগ নেন, আমরা সঙ্গে আছি। ফুটপাত অবৈধ দখল মুক্ত করার মধ্য দিয়েই আমরা সহযোগিতা করতে পারবো।
জাগো নিউজ : ফুটপাতে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা। তাদের পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা...
সাঈদ খোকন : অবশ্যই তাদের দিকটা সবার আগে দেখতে হবে। এ জন্যই আমরা বলেছি, এক্ষেত্রে ধীর নীতি অনুসরণ করবো। কারো পেটে লাথি দিয়ে নগরের উন্নয়ন হতে পারে না।
এএসএস/বিএ/আরআই
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ নীতিমালায় পরিবর্তন এনে নতুন করে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু হবে
- ২ সচিবালয়ে আগুন: তদন্তের স্বার্থে কিছু আলামত বিদেশে পাঠানো হবে
- ৩ থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে ৪০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধানে দুদক
- ৪ সাঁওতালপল্লিতে হত্যা-আগুনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি
- ৫ দাবি পর্যালোচনা ও কমিটি গঠনের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন ‘সহযোদ্ধা’রা