প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ
বিলাসবহুল ‘রেঞ্জ রোভার’ গাড়ি আমদানিতে শুল্কফাঁকি এবং অবৈধভাবে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে বিতর্কিত ব্যবসায়ী প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর পৃথক দুটি পত্র প্রেরণের মাধ্যমে এ সুপারিশ করে অধিদফতর।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, গত ২১ মার্চ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি তদন্ত দল কর্তৃক প্রিন্স মুসার ব্যবহৃত একটি ‘রেঞ্জ রোভার ভোগ’ মডেলের গাড়ি জব্দ করা হয়। গাড়িটি ভোলা বিআরটিএ থেকে শুল্ক পরিশোধের ভুয়া বিল অব এন্ট্রি দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করান হয়। তিনি এতে ১৭ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন মর্মে দাবি করেন।
কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা যায়, ওই বিল অব এন্ট্রি দাখিল হয়নি। ফলে সরকারের প্রায় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ফাঁকির সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রিন্স মুসা, অভিযোগ করেন মইনুল খান। ভোলা বিআরটিএ’র কর্মকর্তার যোগসাজসে তিনি এ দুর্নীতি করেছেন মর্মে অনুসন্ধানে উদঘাটন হয়েছে।
পরবর্তীতে শুল্ক ফাঁকি ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ ও শুনানির প্রয়োজনে প্রিন্স মুসাকে শুল্ক গোয়েন্দা সদরদফতরে তলব করা হলে গত ৭ মার্চ তিনি স্বশরীরে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদান করেন।
শুনানিকালে প্রিন্স মুসা বিন শমসের তার বার্ষিক টার্নওভারের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে ‘সুইস ব্যাংকে রক্ষিত ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার- ৯৬,০০০ কোটি টাকা জব্দ আছে’ মর্মে উল্লেখ করেন।
কিন্তু এ বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের স্বপক্ষে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট কিংবা অন্য কোনো প্রামাণিক দলিলাদি তিনি দাখিল করেননি।
প্রিন্স মুসার ব্যবহৃত বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়িটি ‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ (পর্যটকদের বিশেষ সুবিধা) সুবিধায় ২০১০ সালে শুল্কমুক্তভাবে আনা হয়, যা কোনোভাবেই প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ ব্যতিরেকে বাংলাদেশে ব্যবহার বা রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ নেই।
অথচ ২০১৫ সালে ভোলা বিআরটিএ অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউলভুক্ত অপরাধ- জানান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ডিজি।
তিনি আরও জানান, দুর্নীতির এ অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা দায়ের এবং তদন্ত করার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দুদককে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে গাড়িটিতে শুল্কফাঁকি থেকে লব্ধ অর্থ বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করার জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর অনুমতি চেয়েছে।
ওই দুই চিঠি বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুদক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেইউ/এমএআর/আরআইপি