ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতেই নীতিমালা

প্রকাশিত: ১১:৫৪ এএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪

গণমাধ্যমে নীতিমালা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্প্রচার কার্যক্রমের স্বাধীনতা, দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। এই উদ্দেশ্যে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে নূরুল ইসলাম মিলনের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। এছাড়া জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচকরা যে সব প্রশ্ন উত্থাপন করছেন তা নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার সময় উত্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্ব সাধারণের মতামত আহবান করে খসড়া নীতিমালাটি তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২১ দিন পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়। এখন বিভিন্ন সমালোচকরা যে সব প্রশ্ন উত্থাপন করছেন সেসব প্রশ্ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার সময় উত্থাপন করা হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে সকল নাগরিকের চিন্তা ও বিবেক, বাক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা এবং বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেগুলোও বিচার-বিবেচনা করা প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় সম্প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুষম নীতিমালা থাকা বাঞ্চনীয়। নীতিমালা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্প্রচার কার্যক্রমের স্বাধীনতা, বহুমুখীতা, দায়বদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। এই উদ্দেশ্যে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা’র খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

তিনি বলেন, এই কমিটি নীতিমালার একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করে। উপ-কমিটি বিবিসিসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করে। এরপর নীতিমালার খসড়াটি ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সবার মতামত আহবান করা হয় এবং পরবর্তী ২১ দিন পর্যন্ত তা ওয়েব সাইটে প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মতামত আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), আর্টিকেল-১৯, টিআইবি, বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ প্রেরণ করেন। পত্র-পত্রিকাতেও বেশ কিছু মতামত পাওয়া যায়। প্রণীত খসড়া নীতিমালার ওপর কমিটির অন্যতম সদস্য আন্তজাতিক এনজিও আর্টিকেল-১৯’র উদ্যোগে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ওই কর্মশালায় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নারী সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মতামতের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তিনটি সভা করে কমিটি নীতিমালার খসড়াটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চূড়ান্ত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, চলতি বছর ১২ জুন তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিমালার খসড়াটি পর্যালোচনা করা হয় এবং কতিপয় পর্যবেক্ষণসহ নীতিমালাটি অনুমোদনের সুপারিশ করে। স্থায়ী কমিটির ওই সভার পর্যবেক্ষনগুলো বিবেচনায় নিয়ে খসড়া নীতিমালাটি আরও সমৃদ্ধ করা হয়। এর পর রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ মোতাবেক এ নীতিমালার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা সম্প্রচার নীতিমালার খসড়াটি গত ৪ আগস্ট মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা খসড়াটির সামান্য সংশোধনসহ অনুমোদন করে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার জনসাধারণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের কল্যাণের জন্য নীতিমালাটি প্রণয়ন করেছে। বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে নীতিমালাটি প্রণয়নের জন্য সম্প্রচার সেক্টর থেকে দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। এ জন্যই নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার ধারাবাহিকতায় একটি ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে পরামর্শ দিতে পারেন যাতে নীতিমালায় কোনো অসম্পূর্ণতা থেকে থাকলে আইনের মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি এই নীতিমালা জারির ফলে আমাদের গণমাধ্যম অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।