ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও চাঁদার দাবিতেই পল্লবীর জোড়া খুন

প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ১৩ মে ২০১৫

চাঁদাবাজদের মোটা অঙ্কের টাকার দাবির হুমকিতে ছিলেন ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। এজন্য তিনি পল্লবী থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। অন্যদিকে স্ত্রীর ব্যবসায়িক পার্টনার শাহিনের সাথেও চলছিল দ্বন্দ্ব।এই দুই কারণেই মিরপুর পল্লবীর জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে নিহতের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল বুধবার দুপুর দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে বাসায় ঢুকে ডেসকো’র প্রকৌশলীর স্ত্রী সুইটি আক্তার (২৫) ও তার মামা আমিনুল ইসলামকে(৪০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় ছেলে সাদ (৫) মারাত্মকভাবে আহত হন। পল্লবীর ২০ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর ‘ক্রিস্টাল ডি আমিন’ নামে একটি বাড়ির ৬ষ্ঠ তলায় এ ঘটনা ঘটে।

হত্যাকান্ডের পরপরই র‌্যাব-পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। সিআইডির একটি টিম আলামত সংগ্রহ করেছে। রাত ৮টার দিকে ময়না তদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

হত্যাকারীদের কাউকে গ্রেফতার করা না হলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক এবং নিহত সুইটির ব্যবসায়িক অংশীদার শাহীনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত সুইটির স্বামী জাহিদুল ইসলাম ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) রূপনগর অঞ্চলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী। চাকুরীর পাশাপাশি তিনি ‘ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার’ নামে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন সুইটি আক্তার। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়া উপজেলার গান্ধাইল গ্রামে। একবছর আগে পল্লবীর ওই বাসাটি ক্রয় করেন জাহিদুল।

জাহিদুলের বন্ধু সুমন জানান, দুপুরে মোটরসাইকেলে করে দু`জন আত্মীয় পরিচয়ে ওই বাসায় প্রবেশ করে। বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমিনুলকে আগে কোপায়। তার চিৎকারে সুইটি এগিয়ে এলে তাকেও কোপানো হয়। এতে দু’জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

নিহতের স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনের মতো তিনি স্ত্রীকে রেখে অফিসে যান। দুপুরে স্ত্রীকে ফোন করেন। সে সময় তার স্ত্রী ফোন ধরেননি। পরে ভাত খেতে বাসায় ফিরে দরজায় কলিং বেল চেপেও সাড়া না পেয়ে দরজা নক ঘোরালে দরজা খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করেই দেখেন মাস্টার বেডে ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন মামা আমিনুল। পাশের রুমের বিছানায় স্ত্রী সুইটির রক্তাক্ত নিথর মৃতদেহ। বাথরুম থেকে ভেসে আসছিল ছেলে সাদ-এর কান্নার আওয়াজ। পরে তিনি বাথরুম থেকে ছেলেকে উদ্ধার করেন।

খুনের ঘটনায় সম্ভাব্য কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাওয়া হলে জাহিদুল জানান, ৩০/৩১ মার্চ রাতে একটি ফোনকল আসে। সে সময় মুন্না নামে এক সন্ত্রাসী নিজের পরিচয় দিয়ে মীরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন ধরিয়ে দেয়। ফোনে জিসান তার কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না হলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকিও দেয়। এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (জিডি) করেন। তবে এরপর পুলিশ তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি।

নিহত সুইটির এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সুইটি চেয়ারম্যান, বন্ধু শাহিন ছিল ম্যানেজিং ডিরেক্টর। স্বামী জাহিদ ডিরেক্টর। কয়েকদিন আগে কোম্পানি আলাদা হয়ে যায়। এনিয়ে শাহিনের সঙ্গে স্ত্রী সুইটির কথা কাটাকাটি হয় পার্টনার শাহিনের। জাহিদুল ও সুইটির আত্মীয়-স্বজনদের দাবি, এই দুই কারণে খুন হতে পারেন সুইটি ও আমিনুল ইসলাম।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপি’র মিরপুর বিভাগের ডিসি নেসারুল আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ থেকে ৩২ বছর বয়সী দুই যুবকের এলোপাতাড়ি কোপে সুইটি ও তার মামা শ্বশুর আমিনুল ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমিনুলের শরীরে বেশি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে ছুরির বাঁট এবং ছুরি আলাদাভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময়ে বাসায় থাকা সুইটির ছেলে সাদ বাথরুমে ছিল। তার বাম চোখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপের পর তাদের বরাত দিয়ে ডিসি নেসারুল আরো বলেন, জাহিদুল চাকুরির পাশাপাশি ব্যবসা করতেন। এছাড়া বেশ কয়েকদিন আগে তার কাছে চাঁদা চেয়ে হুমকি এসেছিল। সে ঘটনায় জাহিদুল জিডিও করেছেন। এসবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চাঁদার দাবিতে শত্রুতা ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক এবং নিহত সুইটির ব্যবসায়িক অংশীদার শাহীনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব-৪ এর পরিচালক (সিও) লে. কর্নেল সাহাবুদ্দিন জানান, খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। আধা ঘন্টার মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়েছে হত্যাকারীরা। প্রাথমিক পর্যায়ে খুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।

জেইউ/এসআরজে