‘বুড়া অইয়া ঠেকছি জোয়ান ছেড়িগো ধাক্কাইয়া ভিক্ষা লইতে পারি না’
‘বাজান, আমারে কিছু ট্যাহা দিয়া যান। বুড়া অইয়া ঠেকছি, জোয়ান ছেড়িগো ধাক্কাইয়া ভিক্ষা লইতে পারি না। আইজ জুম্মাবারে যারাই কবরস্থানে জিয়ারত করতে আইছে তাগোর মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই দান-খয়রাত করছে। কিন্তু আমার মতো বুড়ারা শারীরিকভাবে কমজোর হওয়ায় ভিড়ে ধাক্কা-ধাক্কি কইরা বেশি ট্যাকা ভিক্ষা পাই নাই।’
আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের উত্তর দিকের প্রবেশ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধা ভিক্ষুক নাজমুননেসা বেগম।
মাহে রমজানের প্রথম শুক্রবার আজিমপুর কবরস্থান গেটে বিভিন্ন বয়সী অসংখ্য ভিক্ষুকের ভিড় জমে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন উত্তর পাশের গেটটি বন্ধ থাকলেও এদিন খুলে দেয়া হয়। জুম্মার নামাজ শেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিকটজনদের কবর জিয়ারত করতে আসেন। কবর জিয়ারত শেষে অনেকেই নগদ টাকা অনুদান ও ইফতার সামগ্রী দান করেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নাজমুননেসা বলেন, ‘মিছা কতা কইলে তো লইয়া যাইবেন না। রমজানে মানুষ দান খয়রাত বেশি করে। আয় রোজগার ভালোই হয়। আর শুক্রবার দিন মানুষ দান-খয়রাত বেশি করে। কিন্তু যারা জোয়ান, পোলাপাইন ওরা বেশি ভিক্ষা পায়। মানুষ যখন ট্যাকা দেয় তখন চারপাশ থাইক্যা অনেকে হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা নেয়। বুড়া মানুষ জোয়ান, পোলাপাইয়া ও বাচ্চাগো লগে ধাক্কাধাকি কইরা কুলাইয়া উঠতে পারে না।’
তহুরা বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব আরেক বৃদ্ধা এ প্রতিবেদককে ছবি তুলতে দেখে দৌড়ে আসেন। দু’হাত কড়জোর করে বলতে থাকেন, ছবি তুইল্যা লইয়া গিয়া পরে পুলিশের গাড়িতে ভইরা আশ্রয়কেন্দ্রে লইয়া যাইবেন তাই না? বৃদ্ধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবারে, স্বামী সন্তানরা বাইচ্যা নাই, অহন ওপরে আল্লাহ আর নিচে মানুষের দান এই লইয়া বাঁইচ্যা আছি।
জিন্নাত মিয়া নামের এক বৃদ্ধ বলেন, এই বুড়া বয়সে কাম কাজ করতে পারি না, ভিক্ষা না করলে খামুডা কী? আগে নিশ্চিন্তে ভিক্ষা করলেও এখন সারাক্ষণ পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে। রোজার মাসে বুড়া ভিক্ষুকদের ভিক্ষা করার সুযোগ দেয়া উচিত।’
এমইউ/জেডএ/এএইচ/পিআর