ফের প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাইলেন শ্যামল কান্তি
নারায়ণগঞ্জের লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে ফের প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাইলেন। এর আগেও তিনি ‘ষড়যন্ত্র’ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছিলেন।
তিনি অভিযোগ করেন, স্কুল থেকে বিতাড়িত করতেই তার বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র। তিনি আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার’ ও তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবি জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সেখানেই তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শ্যামল কান্তি বলেন, গত বছরের ১৩ মে’র আগে থেকে ষড়যন্ত্র চলছিল আমাকে স্কুল থেকে বিতাড়িত করতে। জীবন দিয়ে স্কুল গড়েছি, মাঠ করেছি, বিল্ডিং করেছি, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। এটাই আমার অপরাধ। আমি ভক্ত অতি শক্ত—এটাই পছন্দ করেনি। আমার ভুল ছিল আমি ইলেকশন করে স্কুল কমিটি করিনি, সিলেকশন করে করেছি। স্কুলের চারপাশে লেবার শ্রেণি বা গরিব মানুষ বাস করেন। তাই বেতন বাড়াইনি। আমার কারণে স্কুলে লুটপাট করা সম্ভব হয়নি। আমি আগে বুঝতে পারিনি— এটা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত ছিল। আমাকে জোরপূর্বক (শুরুর দিকে) রিজাইন করানো হয়েছে।
এই শিক্ষক বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের একটি মাত্র কারণ আমি হিন্দু। হিন্দুকে বিতাড়িত করতেই এই কারসাজি। সারাক্ষণ মেন্টাল টর্চার (মানসিক নির্যাতন) করা হচ্ছে। পয়লা এপ্রিল থেকে যে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছিল, তা কার নির্দেশে তোলা হয়েছে? আমার সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কোথায় যাব, কী করব—জানি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এ দেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু কথাটি কেন আসবে?’
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেন বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মোর্শেদা বেগম। সম্প্রতি এ মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল শ্যামল কান্তিকে। এরপর তিনি জামিনে মুক্তি পান। আদালত আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
আর ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে শ্যামল কান্তিকে স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় গত বছরের মে মাসে। এর দুই মাস পর মামলাটি করেন ওই শিক্ষিকা।
জেল থেকে বের হওয়ার পর আতঙ্কে আছেন উল্লেখ করে শ্যামল কান্তি বলেন, ‘যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।’ ওসমান পরিবারের সেলিম ওসমান ও স্কুলের প্রাক্তন কমিটিকে তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী করেন। তাই তিনি প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তা খারিজ করে দিতে অনুরোধ জানান।
কোনো ধরনের হুমকি পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে শ্যামল কান্তি বলেন, ‘সরাসরি পাইনি। তবে ভয়ে আছি, আতঙ্কে আছি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে। উপস্থিত ছিলেন মহাজোটের সভাপতি প্রভাস চন্দ্র রায়।
এএসএস/এনএফ/এমএস