আর সময় নয় : আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে এখনই আইনি ব্যবস্থা
আপন জুয়েলার্সকে আর সময় দেবে না শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তিন পর্বে সময় দেয়ার পরও জব্দকৃত স্বর্ণের ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পথেই হাঁটবে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃক তৃতীয় ধাপে তলবের পর মঙ্গলবার শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতরে হাজির হন আপন জুয়েলার্সের মালিকরা।
দিনব্যাপী হাজিরায় শো-রুমের জব্দকৃত ‘অবৈধভাবে’ স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের মধ্যে মাত্র ১২৫ কেজি স্বর্ণের হিসাব দেয়ার চেষ্টা করেন আপন গ্রুপ ও আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক (তিন ভাই) দিলদার আহমেদ, গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ। শুল্ক গোয়েন্দার চিঠির সাড়া দিয়ে দুপুর পৌনে ১২টায় তারা গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত হন।
তবে জব্দকৃত স্বর্ণের সঠিক হিসাব দিতে না পারায় আবারও সময় চায় আপন জুয়েলার্স। কিন্তু নতুন করে সময় দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। বিকেলে আপন জুয়েলার্স মালিকপক্ষ হাজিরা শেষে বেরিয়ে যান।
বিকেলে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শফিউর রহমান বলেন, আপন জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের হিসাব দিতে আরও সময় চেয়েছেন। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দারা সময় না বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়ে দেন তিনি।
তিনি বলেন, আপন জুয়েলার্সের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ১২৫ কেজি স্বর্ণের হিসাব দেয়া হয়েছে। তবে এগুলো জব্দ করা স্বর্ণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এগুলো লাগেজ পার্টির মাধ্যমে কেনা। যা পক্ষান্তরে চোরা কারবারির মধ্যেই পড়ে।
তিনি আরও বলেন, আপন জুয়েলার্স মালিকপক্ষ স্বর্ণের যে হিসেব দিয়েছেন, এগুলো দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণের খুচরা বার আকারে কিনেছেন। কিন্তু ক্রয় বাবদ বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। পারচেজ রেজিস্টারের সঙ্গে গরমিল রয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে শফিউর রহমান বলেন, আইনে কোনও মালামাল জব্দের পর প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় থাকে দুই মাস। এ কারণে আপন জুয়েলার্সকে নতুন করে আর সময় দেয়ার সুযোগ নেই। সে সম্ভাবনাও নেই বলে আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আর সময়ক্ষেপণ নয়, নতুন করে সময়ও দেয়া হবে না। এখন আইন অনুযায়ী আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে শুল্ক গোয়েন্দা দফতর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আপন জুয়েলার্সের পক্ষে আসা আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সাইফুল সিরাজ বলেন, জব্দ করা মালামালের বৈধ হিসাব দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। আমরা পাঁচটি ইউনিটের বিভিন্ন উৎস থেকে জব্দ করা মালামালের কিছু হিসাব দিয়েছি। বাকি মালামালের হিসাব দেয়ার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। আমরা শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে সময় চেয়েছি।
শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতর সূত্র জানায়, আপন জুয়েলার্সের প্রকৃত গ্রাহকদের স্বর্ণালঙ্কার ১৮২ জনের স্বপক্ষে প্রায় সাড়ে ৩ কেজি ফেরতযোগ্য স্বর্ণের হিসাব পাওয়া গেছে। এই গ্রাহকদের রশিদ ও ব্যক্তিগত আইডিসহ (এনআইডি/পাসপোর্ট) গ্রাহকদের উপস্থিত হতে অনুরোধ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ৮৫ জন গ্রাহককে স্বর্ণালঙ্কার ফেরত দেয়া হয়।
একইসঙ্গে আটক স্বর্ণের দায়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিলদার আহমেদসহ মালিকপক্ষদের বেলা ১১টায় কাগজপত্রসহ হাজির হওয়ার জন্য পুনরায় তলব করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ও ১৫ মে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দারা প্রায় ১৩.৫ মণ স্বর্ণালংকার ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড আটক করেন। এখন পর্যন্ত মালিক পক্ষ এসবের কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। ধারণা করা যাচ্ছে তারা এ স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন।
এরপর তলবের প্রেক্ষিতে গত ১৭ মে কাকরাইলস্থ শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকরা আটক স্বর্ণের স্বপক্ষে বৈধ কাগজ দেখাতে সময় প্রার্থনা করেন।
জেইউ/জেএইচ/এএইচ/জেআইএম