হাজতখানায় প্রিয় মানুষ, বাইরে ইফতার নিয়ে অপেক্ষা
সোমবার দুপুর ১টা। পবিত্র রমজানের দ্বিতীয় দিন। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাজাতখানার সামনে ইফতার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাহিনুর বেগম। উদ্দেশ্য স্বামী মাহবুব আলমের কাছে ইফতারি পৌঁছে দেয়া। স্বামীর জন্য তিনি বাসা থেকে নিজ হাতে ইফতার তৈরি করে এনেছেন।
ইফতার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজ’র এ প্রতিবেদকের। কথার শুরুতেই তিনি অঝোরে কান্না করতে থাকেন। বলেন, এর আগের রোজায় স্বামী, সন্তানসহ একসঙ্গে ইফতার করেছি। এ রমজানের ইফতারে আমাদের কোনো আনন্দ নেই।
‘স্বামী রাজধানীর সবুজবাগ থানার এক অপহরণ মামলায় এক মাস ধরে কারাগারে আটক। তিনি একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। গত রমজানে বাসায় ইফতার করেছেন। তিনি কখনও একা ইফতার করতেন না। সবসময় পাঁচ থেকে ছয়জন মেহমান থাকত। আজ তিনি কারাগারে। কী দিয়ে ইফতার করছেন তাও জানি না। তাই তার জন্য বাসা থেকে ইফতার তৈরি করে এনেছি।’
‘ইফতার শেষ পর্যন্ত তার কাছে পৌঁছে দিতে পারব কিনা- আল্লাহ জানেন’ বলেন শাহিনুর বেগম।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার সামনে বেলা ১১টার দিকে দাঁড়িয়েছিলেন রাহেলা বানু। তার সঙ্গে ছিল পানি, ফল ও খাবার। সেহেরি শেষ করে আশুলিয়া থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের উদ্দেশে রওনা হন। উদ্দেশ্য ছেলে রাসেলের সঙ্গে দেখা করে ইফতার পৌঁছে দেয়া।
সকাল ১০টায় আদালতে পৌঁছান তিনি। মাদক মামলায় ছয় মাস ধরে কারাগারে আছেন ছেলে জসিম। মায়ের হাতের ইফতার খেতে চেয়েছিলেন। ছেলের আবদার পূরণে, একই সঙ্গে ছেলেকে একনজর দেখা হবে- এমনটি ভেবে আদালতে চলে আসা হতভাগা এ মায়ের।
শাহিনুর বেগম ও রাহেলা বানুর মতো এমন অনেক মা-বোন, স্ত্রী, বাবা কিংবা ভাই প্রতিদিন অপেক্ষা করেন আদালতের হাজতখানার সামনে। প্রিয়জনের মুখ একনজর দেখতে। রোববার থেকে রোজা শুরু হওয়ায় হাজতখানার সামনে লোকসমাগমও বেড়েছে। উদ্দেশ্য কারাগারে থাকা প্রিয়জনের কাছে ইফতার পৌঁছে দেয়া।
একসঙ্গে ইফতার করতে না পারলেও প্রিয় মানুষটির পছন্দের খাবারগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই পরম শান্তি। তবে তাদের কাছে ইফতার পৌঁছবে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও অপেক্ষার প্রহর যেন তাদের শেষ হয় না।
জেএ/জেডএ/এমএআর/পিআর