ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বদলে যাচ্ছে প্রশ্নপত্রের কাঠামো

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:১১ এএম, ১১ মে ২০১৫

সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমাতে ও শিক্ষার মান বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতির পরির্ব্তনের পর এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রশ্নপত্রেরও পরিবর্তন নিয়ে আসতে যাচ্ছে সরকার। বদলে যাওয়া প্রশ্নপত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় স্তরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় ১০ নম্বর কমে  রচনামূলক প্রশ্নে ১০ নম্বর বেড়ে যাবে। আর এই কাঠামোর প্রশ্নপত্র আগামী ২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কার্যকর করা হবে।

রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে প্রশ্নপত্রের কাঠামো পরিবর্তনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মূলত পরীক্ষার হলে শিক্ষকদের নকল সরবরাহ বন্ধে এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নকল বন্ধ এছাড়াও সাব-সেন্টার (ভেন্যু কেন্দ্র) প্রথা বন্ধ এবং নকল সরবরাহকারী শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক পরীক্ষার সময় কিছু অনৈতিক কাজ করছেন। তাদের কেউ কেউ প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার পরপরই বসে পড়েন উত্তর তৈরির কাজে। এরপর সহযোগিতার জন্য তা শিক্ষার্থীদের কাছে দেন। আমরা এমন বেশকিছু শিক্ষককে চিহ্নিত করেছি। এখন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। এরপর তাদের শাস্তি দেয়া হবে। এরা শিক্ষকসমাজের মান ক্ষুন্ন করছেন। তারা শিক্ষক নামের কলংক। তাদের এই পেশায় থাকার অধিকার নেই। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান বলেন,পাবলিক পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রোববার বৈঠক হয়েছে। আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে তা চূড়ান্ত করতে ফের বৈঠক হবে।

সূত্র জানায়, মূলত নকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশ্নপত্রের কাঠামোতে পরিবর্তন আর ফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষার সময়সীমা কমানোর প্রস্তাব আসে। এই দুটি দিকে নজর দিতে গিয়ে এসএসসি ও এইচএসসির পাঠ্যবইয়েও সংস্কার আনতে হচ্ছে।

বর্তমানে এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু আছে। এই পদ্ধতিতে বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে রচনামূলক ৪০ এবং অবজেকটিভে ৩৫ এবং ব্যবহারিকে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হচ্ছে। মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে রচনামূলক ৬০ নম্বর এবং অবজেকটিভে ৪০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। নতুন প্রশ্ন কাঠামোতে বিজ্ঞান বিভাগে রচনামূলকে নম্বর হবে ৫০, অবজেকটিভে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ব্যবহারিকে বর্তমান নম্বর ঠিক থাকবে। মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে রচনামূলকে ৭০ এবং অবজেকটিভে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, একাধিক সদস্য অবজেকটিভ প্রশ্ন ২০ নম্বরে করার প্রস্তাব করে বলেন, তাহলে নকল প্রবণতা কমতে পারে। আবার কেউ কেউ অবজেকটিভ একেবারেই তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেন। তখন কয়েকজন সদস্য বলেন, এটা করা হলে পাসের হারে প্রভাব পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে পাসের হার কমে যাবে। তখন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুবক্কর অবজেকটিভে নম্বর না কমিয়ে রচনামূলক অংশের পরীক্ষা শেষে এবং অবজেকটিভ পরীক্ষা প্রথম ৪০ মিনিটে নেয়ার প্রস্তাব করেন। আলোচনার সূত্র ধরে অন্য বোর্ড চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও নানা প্রস্তাব দেন। শেষে অবজেকটিভে ১০ নম্বর করে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে এতেও জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে দু-একজন মতামত পেশ করেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, নৈর্ব্যক্তিক অংশের উত্তর দেয়া নিয়ে আমরা নানা অভিযোগ পাচ্ছি। এজন্য পরীক্ষার প্রথম ৪০ মিনিটে নৈর্ব্যক্তিক অংশ নেয়ার পক্ষে অধ্যক্ষরা মত দিয়েছেন। বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপনের জন্য আমরা চেয়ারম্যান স্যারকে অনুরোধ করেছিলাম। কেননা পরীক্ষাটি পরে নেয়ায় ছাত্ররা নিজেরাও যদি বলাবলি করে তাহলে একজন  বা দুজন পরিদর্শকের (শিক্ষক) পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। এতে করে যে ছাত্রের ৪০ পাওয়ার কথা ছিল সে যেমন ৪০ পায়, আবার যার ২০ পাওয়ার কথা, সেও ৪০ পায়। ফলে ভালো ছাত্রটি বঞ্চিত হয়। ড. চন্দ আরও বলেন, অবজেকটিভে নম্বর কমানোর ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটিরও সুপারিশ ছিল। কেননা কিছু দুষ্টু শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান নকলে সহায়তা করেন, যাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছিল।

জেআর/এআরএস/এমএস