‘গরমে জানডা আর চলে না’
‘উফ, যা গরম, জানডা আর চলে না।’ বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক সাড়ে ১২টায় রাজধানীর পলাশী মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যালের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল আবুল হোসেন।
প্রখর খরতাপে শশ্রুমন্ডিত মধ্যবয়সী এই ট্রাফিক কনস্টেবলের পরিহিত ইউনিফর্ম ভিজে চুপচুপ। হাত তুলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে করতে দর দর করে ঘামছিলেন তিনি। যানবাহনের সংখ্যা একটু কম হতেই রাস্তার একপাশে ফুটপাতে বসে মাথার টুপি ও শার্টের দুটি বোতাম খুলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
গরমে কি খুব কষ্ট হচ্ছে? এ প্রশ্ন করতেই কিছুটা ইতস্তত ও বিব্রত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। পরিচয় শুনে বললেন, উফ, কয়টা দিন যা গরম পড়ছে। জানডা আর চলে না, কিন্তু ডিউটি চলে। যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টায় ডিউটিতে যোগ দেন। চলে বিকেল পর্যন্ত।
তিনি জানান, গরমে রাতেও ঘুমাতে পারেন না। ফজরের নামাজের আগেই উঠে নামাজ পড়ে ঘর থেকে বের হন। সকাল ৬টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পলাশী মোড়ে ডিউটি শুরু করেন।
‘গরমে কষ্ট হলেও যানজটের সৃষ্টি না হলে ডিউটি করতে খারাপ লাগে না। তবে একবার চৌরাস্তায় যানজট লাগলে তখন যানজট ছাড়াতে দৌড়ঝাঁপে খুব কষ্ট হয়।’
আবুল হোসেন জানান, ২৫ বছর আগে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। বিভিন্ন জেলা ঘুরে এখন ট্রাফিক বিভাগে ঢাকায় আছেন। এক সময় ফূর্তি মনে ডিউটি করলেও এখন বয়স হয়েছে। ডায়াবেটিস ও প্রেসার শরীরে বাসা বেঁধেছে। তাই আগের মতো শরীর আর কুলোয় না। গত কয়েকদিনের গরমে ইউনিফর্ম শরীরের ঘামে ভিজে আবার রোদে শুকায়।
আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে এগিয়ে আসেন তার সহকর্মী ও ব্যাচমেট আসাদ মিয়া। ‘গত কয়েকদিন গরমে ডিউটি করতে করতে একটা সময় মনে হয় ইউনিফর্মটা খুইল্যা খালি শরীরে বইস্যা রেস্ট নেই। কিন্তু সিনিয়র অফিসাররা দেখলে শাস্তি দিতে পারে এ ভয়ে ভেজা ইউনিফর্ম নিয়েই ডিউটি করি’ বলছিলেন আসাদ মিয়া।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দেশের ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া ও কক্সবাজারের কিছু অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এমএমএ/ওআর/জেআইএম