শুল্ক ও ভ্যাট না দেয়ায় মামলা হবে রেইন ট্রির বিরুদ্ধে
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান বলেছেন, বিদেশি মদ রাখার বিষয়ে কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট খাতে আদায়কৃত ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি হোটেলটি। এর স্বপক্ষে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি হোটেল এমডি আদনান হারুন।
এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট আইন ও মাদক আইনে মামলা হবে। রেইন ট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতর কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হোটেলটির কার্যক্রম শুরুর পরে এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ ভ্যাট খাতে আদায় করে ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করেছে হোটেলটি। বাকি ৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা তারা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। তথ্য লুকিয়ে তারা ওই টাকা মুনাফা হিসেবে দেখিয়েছে।
ড. মইনুল খান বলেন, এটা শুধু ভ্যাট আইনে অপরাধ নয় আত্মসাৎ ও প্রতারণাও বটে। তাই এর বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে লিখিত সুপারিশ করা হবে।
বিদেশি মদ শুল্ক মুক্ত পণ্য না। যেহেতু বিদেশ থেকে আসা পণ্য সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে আনা হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে শুল্ক আইনে ও চোরাচালানের অভিযোগেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ড. মইনুল খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য বের হয়ে এসেছে। তারা জিজ্ঞাবাদে কখনো মৌখিকভাবে ও কখনো লিখিতভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ওইদিন হোটেলে যেসব বিদেশি মদের বোতল পাওয়া যায় তার পক্ষে তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তারা এটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিতের চেষ্টা করেছিল। সেখানে মদ নয় বরং জুস ছিল বলেও প্রচার করেছিল।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত মদের একটা নমুনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে পাঠানোর পর পরীক্ষার প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে সেটা বিদেশি মদ। এ পণ্যে ১৩ দশমিক ৫ ভাগ অ্যালকোহল রয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া এমন কিছু মজুদ বা বিপণন করা যায় না। আমাদের ধারণা সেগুলো বিপণনের জন্য রাখা ছিল।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে আমরা ১০১নং কক্ষ থেকে ১০টি বিদেশি মদের বোতলও জব্দ করেছি। তারা স্বীকার করেছে তাদের বারের লাইসেন্স নেই। এখানে অতীতেও মদ পরিবেশন হয়েছে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। তবে এর স্বপক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি হোটেল এমডি।
জিজ্ঞাসাবাদে মদ সম্পর্কে হোটেল এমডি কী তথ্য দিয়েছেন জানতে চাইলে ড. মইনুল বলেন, এমডি আদনান হারুন বলেছেন, গত ৩০ এপ্রিল এক চীনা নাগরিক হোটেলটিতে রাত্রীযাপন করেন। সে সময় মদের বোতল তিনি (চীনা নাগরিক) আনতে পারেন। রুম পরিষ্কারের সময় এগুলো উদ্ধার করে তারা ১০১নং কক্ষে রেখেছিলেন।
হোটেলটির বিদেশি ম্যানেজার ফ্রাংক হেনরি ফরগেইট এবং ফুড ও বেভারেজ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার ইমদাদুল হক এ পণ্যের ব্যাপারে অবহিত বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন আদনান হারুন।
অবৈধ মদ উদ্ধারের বিষয়ে তথ্য জানতে আজই ডাকা হয়েছে রেইন ট্রি হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেইট ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ম্যানেজর ইমদাদুল হককে।
ড. মইনুল বলেন, মদের বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট কাউকে জানিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এখানে একটা অস্পষ্টতা রয়েছে। এমডি আদনান হারুনের বক্তব্যের সত্যতা জানতে আজই হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাংক হেনরি ফরগেইট ও ম্যানেজার ইমদাদুল হককে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। দুই পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে তার যথার্থতা নিরূপণ করে যারা ওই মদ রাখার পেছনে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি মাদক আইনে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য, বনানীর চার তারকা ওই হোটেলে গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার দুই বন্ধুসহ পাঁচজনকে সেখানে আসামি করা হয়।
জেইউ/জেডএ/এএইচ/এমএস