‘প্রাইভেটকার না পেয়ে মনীষাকে হত্যা করে স্বামী’
চাহিদা অনুযায়ী যৌতুকের টাকা ও প্রাইভেটকার না পেয়ে কলেজছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহুরাকে (মনীষা) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনেরা।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মনীষার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে তারা এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে মনীষার বাবা হাজী মোস্তফা কামাল জানান, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি পারিবারিকভাবে দক্ষিণখান থানার (৩৮২, জামান গার্ডেন) আজমপুরের দেওয়ান বাড়ির আখতারুজ্জামানের ছেলে কে এস এম খালেকুজ্জামান তারেকের সঙ্গে মনীষার বিয়ে হয়। ওই সময় মনীষা লালমাটিয়া মহিলা কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল।
‘বিয়ের সময় মেয়েকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, জামাইকে ডায়মন্ডের আংটি, একটি ঘড়ি, এসি এবং আসবাপত্রসহ ১০ লাখ টাকার মালামাল দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও মন ভরেনি তারেকের।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন যেতে না যেতেই নানা অজুহাতে যৌতুকের জন্য মনীষাকে চাপ দিতে থাকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এক পর্যায়ে যৌতুক না দিলে মনীষাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘গত ২৫ এপ্রিল মনীষাকে যৌতুকের জন্য মারধর করে তারেক। মনীষা বিষয়টি আমাকে জানায়। এও বলে- আগামী ১০ দিনের মধ্যে ১০ লাখ টাকা ও একটি এফপ্রিমিও প্রাইভেটকার না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।’
‘মেয়ের কথা চিন্তা করে চলতি মাসের এক তারিখ (০১ মে) দুই লাখ টাকা দিয়ে মনীষার ছোট ভাইকে তারেকের কাছে পাঠাই। একই সঙ্গে বলা হয়-শিগগির তার দাবি করা টাকা ও গাড়িও দেয়া হবে। কিন্তু তারেকের দেরি সহ্য হয়নি। ৪ মে রাতে আমার মেয়ে মনীষাকে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারেক। পরে টঙ্গী হাসপাতালে তার মৃতদেহ ফেলে স্বপরিবারে পালিয়ে যায়।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘তারেকের পরিবার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে মনীষার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে।’
মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি একজন অসহায় পিতা। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। যাতে এ বিচার দেখে আর কোনো যৌতুক লোভী স্বামী এ ধরনের অপরাধ না করতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে নিহত মনীষার বোন মুনিয়া মোস্তুফা অভিযোগ করে বলেন, ‘ফাতেমাতুজ জোহুরা মনীষাকে হত্যা করে বাথরুমে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার গালে আঙ্গুলের ছাপ ছিল।’
‘এর আগে মারধার করায় মনীষার চোখের উপরের পাতি ছিদ্র হয়ে যায়। শরীরেও মারধরের দাগ ছিল।’
তিনি বলেন, এখন মনীষার স্বামী তারেকের পরিবার প্রভাব খাটিয়ে মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মনীষার মা দিলরুবা আক্তারও।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত মনীষার খালা আসমা আক্তার, বড়ভাই আরাফাত, ছোটভাই সাহাবুদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ/এমএমএ/এমএস