ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

তথ্য দিতে গড়িমসি করছে হোটেল রেইন ট্রি কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৮:৪০ পিএম, ০৮ মে ২০১৭

রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দ্য রেইন ট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ রাখঢাক করছেন। পুলিশকে তথ্য দিতে করছে গড়িমসি। এক মাসেরও বেশি সময় আগের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ রাখা হয়নি বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বিকেলে বনানী থানাধীন কে ব্লকের ২৭ নং রোডের ৪৯ নং হাউজের দ্য রেইন ট্রি হোটেলটিতে যাওয়া হলে ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরা। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেইট ও এক্সিকিউটিভ ইন্টারনাল অপারেশন (ইআইও) ফারজানা আরাফ। ‘অভ্যন্তরীণ’ কারণে সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তারা।

ইআইও ফারজানা আরাফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা আমরা জানিয়েছি।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ওইদিন এ ধরনের কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেছিল কি না তা তাদের জানার বিষয় নয়। কারণ ওই সময় কেউ হোটেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেননি। এতদিন পর মামলা হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যে কিছু আন্দাজ করা সম্ভব তাও হচ্ছে না। কারণ এক মাসের বেশি সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ আমরা রাখি না।’

সেদিন জন্মদিনের পার্টির কথা বলে কারা কত টাকায় কত সময়ের জন্য হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়েছিল জানতে চাইলে তিনি জানান, হোটেলের প্রাইভেসি ও স্বার্থ-বিরোধী কোনো তথ্য দিতে তিনি বাধ্য নন। হোটেলটিতে বার নেই বলে দাবি করেন তিনি।

ফরাসি নাগরিক ও হোটেলটির জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেইট ইংরেজিতে বলেন, ‘পুলিশকে আমরা সহযোগিতা করছি। প্রয়োজনীয় সবধরনের তথ্য আমরা দিয়েছি। আপনাদের কিছু জানার থাকলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’

সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই হোটেলটিতে আসেন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কর্মকর্তা আব্দুল মতিন। কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি জানান, দুই তরুণীর মামলায় তোলা অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত কাজে হোটেলে এসেছেন তিনি।

তদন্ত কর্মকর্তা প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করার পর হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। এর আগে তিনি পুরো এলাকার ম্যাপ তৈরি করেন। ওই হোটেলের আশেপাশে কী কী রয়েছে, কতটি বাসা, রোড কতটি, বাসার হোল্ডিং নম্বর সংগ্রহ করেন বলে জানান- তদন্ত কমমকর্তার সঙ্গে আসা পুলিশ সদস্য নূর মোহাম্মদ।

বনানী থানার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় জাগো নিউজকে বলেন, হোটেলটির কোন ফ্লোরের কোন কক্ষে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, হোটেলে বার রয়েছে কি না, সম্ভাব্য কোনো আলামত মেলে কি না তাই জানতে এসেছিলাম। ঘটনার রাতে দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। হোটেল কর্তৃকক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ দেয়নি। তারা জানিয়েছে, ৩০ দিনের বেশি সময়কার ফুটেজ তারা রাখেন না। অটো ডিলেট হয়ে যায়। বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

হোটেলের বাইরের বিপরীতে থাকা একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, হোটেলটিতে বার রয়েছে। জানা মতে, তা অনুমতি ছাড়াই চলছে। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের আনাগোনা এই হোটেলে বেশি। তবে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে শুনলেও কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এর আগে, সোমাবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনারের কক্ষে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি, উত্তর) উপ-কমিশননার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। আসামিরা যত প্রভাবশালীই হোক না তাদের গ্রেফতার করা হবে, ছাড় দেয়া হবে।

ধর্ষণে অভিযুক্তরা প্রভাবশালী পরিবারের। তাদের প্রভাবে মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে বলে অভিযোগ ভিকটিম পরিবারে। এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি উত্তরের এই ডিসি বলেন, মামলা হয়েছে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্ত করছে। থানা পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করবে। ডিবি পুলিশও আইন অনুযায়ী আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত কেউ পালিয়ে গেছে কি না সে রকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ পালিয়ে যেতে পারবে না। তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাতের জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনার ৪০ দিন পর শনিবার সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী।

এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি হচ্ছেন সাদমান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম উল্লেখ করা হয়নি)।

তবে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় দুই তরুণীর ওপর দায় চাপিয়েছেন অভিযুক্ত সাফাত আহমেদের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। তিনি দাবি করেছেন, তার ছেলের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এমন কাজ করেছেন তার সাবেক স্ত্রী।

দিলদার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে (সাফাত) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকাকে বিয়ে করে। তবে আমি সেই বিয়ে মেনে নেইনি। বিয়ের পর সেই মেয়ের নানা ধরনের অসৎ উদ্দেশ্য দেখে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। সাফাতের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী এমনটি করিয়েছে।

সেদিন রাতে রেইন ট্রি হোটেলে সাফাতের ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেই রাতে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা আপসেও হতে পারে। ধর্ষণ হলে নিশ্চয়ই ৪০ দিন মামলা করার অপেক্ষা করত না তারা। পুলিশের রিপোর্ট পেলে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা হবে বলেও হুমকি দেন দিলদার আহমেদ।

অন্যদিকে মামলা দায়েরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওই দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের আলামত মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এদিকে মামলার দুইদিন পরও ধর্ষকদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি।’

জেইউ/বিএ

আরও পড়ুন