প্রবাসী আয় কমলেও প্রবৃদ্ধি ৭.২ অর্জনের আশাবাদ
চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ২ অর্জনের আশা ব্যক্ত করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। সোমবার সংসদে উত্থাপিত বাজেট ২০১৬-১৭: দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। সংসদে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় বৈদেশিক খাতের নিট আয় কমেছে ৪৫২ কোটি টাকা। প্রবাসী আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৬৪ ভাগ তারপরও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়ন বৃদ্ধিসহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকায় চলতি অর্থ বছরে ৭ দশমিক ২ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জিত হবে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমায় এবং ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে আয় বাড়ায় ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণের পরিমাণ অনেক কমেছে। বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে ঘাটতি হয়েছে জিডিপির শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ। ঘাটতি মোকাবলোয় বৈদেশিক খাত থেকে গত অর্থবছরে নিট অর্থায়ন হয়েছিল ৭৭৪ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে অর্থায়নের পরিমাণ কমে ৩২৪ কোটি দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক খাত থেকে নিট অর্থায়ন ৪৫২ কোটি টাকা কম হলেও ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে অর্থায়নের টার্গেট ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা অতিক্রম করে প্রথমার্ধেই অর্থায়ন হয়েছে ২২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার বার্ষিক পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে রয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা ঋণগ্রহণের টার্গেট করেছিল। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক অবস্থান বজায় থাকবে বলেও প্রত্যাশা করা হয়।
৬ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ
চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বা ছয় মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের তুলনায় দশমিক ৬৮ শতাংশ কম এবং বাজেটে উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম। যেখানে গত অর্থবছরের ওই একই সময় মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেলেও খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর হতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্য্ন্ত খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্তোষজনক কৃষি উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের স্থিতিশীল মূল্য, অনুকূল মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে দেশব্যাপী পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। বিধায় সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আর বাড়বে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ভালো
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ভালো। চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গত বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ আয় বেড়েছে এবং বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ রাজস্ব আয় হয়েছে। এসময় রাজস্ব আয় হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে বাজেটের ৯৫ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বা বরাদ্দের ২৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে গত বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারের দশটি মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের ৭৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ ব্যয় করলেও চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত তারা বরাদ্দের ৩০ ভাগ ব্যয় করতে পেরেছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদনে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অত্যাধিক ব্যয়ের প্রবণতা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে পরিকল্পনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অগ্রাধিকার নির্ধারণের তাগিদ দেয়া হয়।
এইচএস/জেডএ/জেএইচ/এমএস