৭২ শতাংশ নারী মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও বেতন পান না
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ৭২ শতাংশ নারীশ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটি পেলেও এ সময় পান না কোনো বেতন-ভাতা। কোনো রকম কর্মবিরতি পান না ৪০.৬ শতাংশ নারী। তাছাড়া ৫০ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় কর্মস্থলে পান না কোনো বিশেষ সুবিধা। ৫৯ শতাংশ শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রে খাবারের আলাদা কোনো কক্ষ নেই। কর্মক্ষেত্রে বসে কিংবা বাইরে খাবারের বন্দোবস্ত করতে হয় তাদের। এছাড়া পোশাক ও নির্মাণশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে ৫১ শতাংশ শ্রমিকের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) থাকলেও ৪৯ শতাংশ শ্রমিক ব্যক্তিগতভাবেই নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেন।
সাউথ এশিয়ান ইযুথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট (সেরিড) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা শহরের পোশাকশিল্প কারখানার ৩২৮ জন শ্রমিক ও নির্মাণ শিল্পের ৬৬ জন শ্রমিকের উপর গবেষণা চালায় সংস্থাটি। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ২৯ পশ্চিম পান্থপথে বীর উত্তর কাজী নুরুজ্জামান সড়কের এসইএল সেন্টারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরে সেরিড।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৬.৫ শতাংশ শ্রমিক অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে। ১৩ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে নেই টয়লেট, টয়লেট থাকলেও ৫৭ শতাংশ শ্রমিক বলছেন, তা ব্যবহারের অনুপযোগী। ২৭ শতাংশ কর্মেক্ষত্রে নেই পর্যাপ্ত আলো। তীব্র গরমে কাজ করতে হয়। ৩০.৭ ভাগ শ্রমিক অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির কাজ করেন ও ৫৯ শতাংশ শ্রমিক দীর্ঘদিন (ওভারটাইম) কাজ করায় দুর্ঘটনার কারণ হয়। ১৫ শতাংশ শ্রমিক সকালে নাস্তা না করেই কাজে যোগদান করেন।
৭৩ শতাংশ শ্রমিক বলছেন, কর্মস্থলে রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। তবে মাত্র ৩৭ শতাংশ কর্মস্থলের শ্রমিক মেডিকেল অফিসার কর্তৃক চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকেন। ৩৬ শতাংশ নারীশ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটিই পাননি। যে কারণে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ শ্রমিকের উচ্চতার চেয়ে দৈহিক ওজন কম থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। ৬৭.৩ শতাংশ শ্রমিক পেশাগত কারণে কোনো না কোনো কারণে অসুস্থতায় ভুগেছেন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, নির্মাণ শ্রমিকদের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোগে পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। ৬৯ শতাংশ পোশাকশিল্পের শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে নির্মাণশ্রমিকদের ৫৮ শতাংশ অসুস্থ। তবে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের তুলনায় নির্মাণশ্রমিকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য আন্দোলনের সদস্য সচিব ফরিদা আক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ডা. মনিরুল ইসলাম খান, চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল কাফি, প্রথম আলোর চিফ রিপোর্টার শাহেদ মো. আলী, গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল ইসলাম।
জেইউ/বিএ/পিআর