সোনার ধানে সোনা রঙ নেই
সুনামগঞ্জ শহর থেকে নেমে তাহিরপুর যেতে ঘণ্টা দেড়েকের পথ। গ্রামের বিস্তীর্ণ প্রান্তর ফালি করে সুনামগঞ্জ-তাহেরপুর সড়কের দুই পাশ যেন প্রকৃতির আদি রূপের সাক্ষী। যানবাহনের ভরসা সিএনজি অথবা মোটরবাইক।
চালক বিপ্লব হোসেন অনেকটাই গল্পপ্রিয়। দক্ষও বটে। আধা ঘণ্টা আসতেই সিএনজির গতি খানিকটা কমিয়ে দিলেন। পাকা রাস্তা। সরু-ই বলা চলে। তবে গাড়ির গতি এমন দিনে বেশিই থাকে বলে জানান বিপ্লব।
বললেন, ‘এখন যে গতিতে (কম) গাড়ি চালাতে হচ্ছে, আরও সপ্তাহ দুয়েক পরে সে গতিতে গাড়ি চালাতে হতো। মাড়াইয়ের মৌসুমে এ সড়কে গাড়ি চালানো দায়। এই একটি সড়কই তো সকলের ভরসা।’
তবে প্রকৃতি সে সময় দেয়নি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরবাসীকে। শনির হাওরে বন্যা এ অঞ্চলের কপালে শনি লাগিয়েছে। হাওরের পানির নিচে এখন এ অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন।
হাতের কড় গুণে আর মাত্র দশ কি পনের দিনের অপেক্ষা ছিল হাওরবাসীর। অপেক্ষার পরিবর্তে এখন শোকের মাতম বইছে হাওরে। উত্তাল সাগরের রূপ হাওরে। কাঁচা-পাকা ধানের সবই পানির নিচে।
গত চারদিন পানি ঢোকার আতঙ্কে এখানকার মানুষ। সেই আতঙ্ক থেকেই প্রায় কাঁচা ধান কেটে সড়কে তুলছেন চাষীরা। অনেকেই হাওরে পানি ঢুকতে পারে এমন আতঙ্ক থেকে আগেই ধান কাটা শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ আবার হাওরে পানি প্রবেশের মুহূর্তেও নৌকায় করে ধান কেটেছেন। সড়কবোঝাই ধান। কেউ নৌকা থেকে নামাচ্ছেন, কেউ মাড়াই করছেন। আবার কেউ ধানের পালা দিচ্ছেন।
ধানের দেখা মিলছে বটে, তবে তাতে রূপ মিলছে না। সোনার ধানে সোনার রূপ নেই। সবুজ রঙই ভর করে আছে তাতে।
তাহেরপুর উপজেলার চিখসা গ্রামের মমিনুল হক। বলেন, ‘কপালই কাঁচা। নইলে এমন দিনে হাওরে পানি আইব ক্যামনে? পঞ্চাশ বছর বয়সে প্রথম এমন ঘটনা দেখলাম। তিন কেয়ার (৩৪ শতাংশ প্রতি কেয়ার) ধান পানির নিচে। এক কেয়ার ধান কাটতে পারছিলাম। তাও কাঁচা। ধানের সবুজ ভাব কাটেইনি।’
বাসুদেব নামের আরেক চাষী বলেন, ‘তেল-সার খরচ করে কেউ এমন সবুজ ধান কাটে? কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। এ ধান থেকে কিছুই হবে না। এ চালের ভাতও খাওয়া যাবে না। মনের সান্ত্বনার জন্যই ধান কেটে আনা আরকি।’
গত রোববার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বাঁধ ভেঙে শনির হাওর প্লাবিত হয়। এতে কয়েক হাজার একর জমির ধান পানির নিচে ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার কৃষক এখন দিশেহারা।
এএসএস/ওআর/জেআইএম