ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

টার্গেটে পৌঁছতে পারিনি, তবে...

প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকনের মেয়াদের দুই বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের পর ৬ মে শপথ নেন তিনি। মেয়র নির্বাচনের আগে ও পরে নগরবাসীকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত দুই বছর মেয়রের কার্যক্রমে কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে। তবে রয়েছে ব্যর্থতাও।

দুই বছর মেয়াদ পূর্তি উপলক্ষে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহেদ শফিক। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারে আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

জাগো নিউজ  : নগর ভবনে যখন আসেন তখন কর্পোরেশন ৪০০ কোটি টাকা ঋণগ্রস্ত ছিল। বর্তমানে কর্পোরেশনের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন?
সাঈদ খোকন: কর্পোরেশনের আয়ের অবস্থা ভালো নয়। তবে রাজস্ব আয় সাড়ে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স ১৫০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সরকার যে আয় করে তার ৬০ ভাগ আসে ঢাকা শহরের নাগরিকদের কাছ থেকে। যেখানে উন্নয়ন বাজেটের অর্ধেকের চেয়েও বেশি ঢাকা শহরের মানুষ দিচ্ছে সেখানে কি তাদের পেছনে এ উন্নয়ন বাজেটের ২ শতাংশ ব্যয় করা যুক্তিযুক্ত হবে না?

জাগো নিউজ : কর্পোরেশনে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলত সেগুলোর বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা?
সাঈদ খোকন : প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পিপিপি। এক্ষেত্রে জিওবি থেকে যে অর্থ দেয়া হয় সেসব প্রকল্প নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। নিজস্ব ফান্ডের যেসব প্রকল্প তা বাস্তবায়নে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিতে চান না। কারণ জিওবির অর্থ সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। নিজস্ব ফান্ডের টাকা পেতে দেরি হয়।

জাগো নিউজ : নগরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আপনার পরিকল্পনা কি?
সাঈদ খোকন: দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ঋণগ্রস্ত সিটি কর্পোরেশন। সেখান থেকে উত্তরণে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি।  নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া ৩৩৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। জিওবি এবং ডিএসসিসির যৌথ অর্থায়নে দুই হাজার ৪২৬ কোটি ২৫ লাখ টাকার পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। চলতি বছরের জুনের মধ্যে নগরী অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

khokon

জাগো নিউজ : দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর হয়েছে। পুরো সময়টুকু আপনার কাছে কেমন মনে হচ্ছে?
সাঈদ খোকন : এ দুই বছরে কখনও চাপ অনুভব করিনি। উপভোগ করেই দায়িত্ব পালন করেছি। অনেকেই বলেছে দায়িত্ব পালনকালে চাপ বা জটিল অনেক বিষয় মোকাবেলা করতে হবে। আসলে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ মনে হয়নি। কাজগুলো করে আনন্দ পাচ্ছি।

জাগো নিউজ : দায়িত্ব পালনকালে কোনো সমস্যায় পড়েছেন কিনা?
সাঈদ খোকন : দায়িত্ব পালনের বিষয়টা ‘ইজি গোয়িং’ বিষয় নয় যে বলেই ফেললাম সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল। সমস্যা আছে মোকাবেলা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : গত দুই বছরে কেমন সফলতা পেয়েছেন?
সাঈদ খোকন : আজ থেকে দুই বছর আগে সড়কের লাইট জ্বলত না। সড়ক ছিল ভাঙা। রাস্তাঘাটে বর্জ্যের স্তূপ। সব মিলিয়ে নাগরিক সেবা ছিল শূন্যের কোটায়। প্রথম দুই বছরে মৌলিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলো সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। বাবা মেয়র থাকাকালে কর্পোরেশনের কি কি সমস্যা ছিল, সেগুলো কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে সে অভিজ্ঞতা আমি তখনই নিয়েছি।

জাগো নিউজ : নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কি?
সাঈদ খোকন : দু-একটি ছাড়া নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে স্মার্ট ও নিরাপদ নগরী, সবুজ ঢাকা, পরিচ্ছন্ন ঢাকা, বাসযোগ্য, যানজট, জলাবদ্ধতা, মশা নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস, মাদক ও বর্জ্যমুক্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি রোধ, উন্নত রাস্তাঘাট, ফুটপাত দখলমুক্ত, সড়কবাতি, খাল উদ্ধার, পার্ক উন্নয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো, নিরাপদ খাবারের নিশ্চয়তাসহ বেশকিছু প্রতিশ্রুতি প্রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। বড় বড় কিছু কাজ বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসবের বিচারের দায়িত্ব এখন নগরবাসীর।

khokon

জাগো নিউজ : নগরীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। সমস্যাটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
সাঈদ খোকন : জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তারপরও কাজ করছি। অনেক উন্নত ড্রেন নির্মাণ করেছি। বিশেষ করে শান্তিনগর এলাকায় আগামী জুনের মধ্যে ৮৫ ভাগ জলাবদ্ধতা শূন্যে চলে আসবে। অন্য এলাকায়ও কাজ চলছে। গত দুই বছরে ৩০০টি সড়কের উন্নয়ন করেছি। ৩৭ হাজার এলইডি বাতি লাগানোর কাজ চলছে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে পুরো ঢাকা আলোতে জ্বলবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করেছি। অবৈধ যানবাহন ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান। এসটিএস ও ডাস্টবিন লাগিয়েছি। কিছু কিছু চুরি হয়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করেছি। আমরা টার্গেটে পৌঁছতে পারিনি। তবে যে অবস্থান থেকে কাজটা শুরু করেছি তা থেকে অনেক দূর এগিয়েছি। এখন সড়কে আগের মতো অন্ধকারের কারণে চুরি বা ছিনতাই নেই। বুড়িগঙ্গা ও খাল উদ্ধার কাজ হাতে নিয়েছি। এছাড়া ১২টি খেলার মাঠ ও ১৯টি পার্ক আধুনিকায়নের কাজ চলমান।

জাগো নিউজ : কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
সাঈদ খোকন: কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই বরখাস্ত। দুর্নীতি রোধে ডিজিটাল হাজিরা, বদলি, বিভাগীয় মামলাসহ অনেক কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

জাগো নিউজ : কর্পোরেশনের পরিবহন নেতাদের অনেকেই কাজ না করেই নিয়মিত বেতনসহ ওভারটাইম দেখিয়েও অতিরিক্ত টাকা নেন। এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা?
সাঈদ খোকন: স্পষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব। যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জাগো নিউজ : উন্নয়ন কাজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
সাঈদ খোকন : চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীন ৯৭ দশমিক ৭০ কোটি টাকার এমপি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৬১ দশমিক ০৯ কিলোমিটার নর্দমা, ১৩ দশমিক ৩১ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণের প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়।

নবসংযুক্ত ডেমরা, মান্ডা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নে ৬৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ, ২০টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, ৪৮ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ, ১১৬ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তার এলইডি বাতি স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ প্রক্রিয়াধীন। ২৪৩.২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি আধুনিক ১০ তলা কমিউনিটি সেন্টার ভবন নির্মাণ ও ৩টি বিদ্যমান কমিউনিটি সেন্টার আধুনিকায়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন। ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন সড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও কন্ট্রোল সিস্টেম স্থাপন প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। ১১৩ দশমিক ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০টি চলন্ত সিঁড়ি গুলিস্তান এলাকায় ‘এলিভেটেড ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্প’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজাইন ও নকশা সংশোধনের কাজ চলমান। ১২৪৮৫ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রধান প্রধান সড়কে ৬০ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেল নির্মাণ প্রকল্প পরিকল্পনাধীন। ১৫১৭ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মেকানাইজড পার্কিং স্থাপন এবং সড়ক মেরামতের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ প্রকল্প ডিপিপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও ১২২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ ও ৫৩ দশমিক ২৪ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণের জন্য আরও একটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন কাজ চলছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বুড়িগঙ্গার তীর ও পার্শ্ববতী এলাকা উন্নয়ন এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন কাজ চলমান।
 
এমএসএস/জেএইচ/ওআর/এমএস